মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
ইদানিং আজানের সময় “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” শব্দ শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মোছা বিষয়ে বেশ বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা পেতে অনেকে অনুরোধ করছেন। সেই হিসেবে এ বিষয়ে অল্প সময়ে কিছু তথ্যাদি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হল।
হাদীসের কোন গ্রহণযোগ্য কিতাবে আজানের সময় আঙ্গুল চুমু খাওয়া ও চোখে মোছা সম্পর্কিত কোন কথা বর্ণিত হয়নি।
আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বন্ধুরা যেসব কিতাব থেকে উক্ত মাসআলাটির প্রমাণ পেশ করার চেষ্টা করে থাকেন, তা মূলত কয়েকটি। যথা-
১
কানযুল ইবাদ।
২
ফাতাওয়ায়ে সূফিয়া।
৩
কুহুস্তানী রহঃ এর লিখা জামেউর রূমূজ।
৪
কিতাবুল ফিরদাউস।
মূল উৎস এ ৪টি গ্রন্থ। যে ৪ কিতাবের রেফারেন্সে তা আনা হয়েছে, ফাতাওয়া শামী, তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ, তাফসীরে রূহুল বয়ান, আলবাহরুর রায়েক এবং জালালাইনের হাশিয়ায়।
তাহলে মূল উৎস কিন্তু ৪টিই থাকছে। পরবর্তী কিতাব তথা ফাতাওয়া শামী, মারাকিল ফালাহ ইত্যাদি গ্রন্থে উল্লেখ হওয়া মানে আলাদা হয়ে যাওয়া নয়। বরং মূল প্রমাণ্য উক্ত কয়েকটি কিতাবই থাকে। এবার আমরা দেখবো উপরোক্ত কিতাবগুলোতে বর্ণিত সব কথাই কি গ্রহণযোগ্য? নাকি তাহকীক করতে হবে?
কানযুল ইবাদ
ﻛﻨﺰ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩ، ﻓﻲ ﺷﺮﺡ ﺍﻷﻭﺭﺍﺩ
ﻳﻌﻨﻲ : ﺃﻭﺭﺍﺩ ﺍﻟﺸﻴﺦ، ﺍﻷﺟﻞ، ﻣﺤﻴﻲ ﺍﻟﺴﻨﺔ : ﺷﻬﺎﺏ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﺴﻬﺮﻭﺭﺩﻱ .
ﻭﺍﻟﺸﺮﺡ : ﻟﺒﻌﺾ ﺍﻟﻤﺸﺎﻳﺦ . ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺪ . ﻣﻨﻘﻮﻝ ﻣﻦ : ﻛﺘﺐ ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ، ﻭﺍﻟﻮﺍﻗﻌﺎﺕ .
ﻭﻫﻮ : ﺷﺮﺡ ﻓﺎﺭﺳﻲ : ﺑﻘﻮﻟﻪ . ﻟﻌﻠﻲ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺍﻟﻐﻮﺭﻱ، ﺍﻟﺴﺎﻛﻦ ﺑﺨﻄﺔ : ﻛﺮﻩ .
কানযুল ইবাদ ফী শরহিল আওরাদ অর্থাৎ আওরাদুশ শায়খুল আজল মুহিউস সুন্নাহ শিহাবুদ্দীন আসসাহরাওয়ার্দীর ওযীফা এবং মালফুজাত কোন বুযুর্গ ব্যক্তি লিখেছেন। যা ফাতাওয়ার কিতাব ও জীবনী গ্রন্থ থেকে নেয়া। এক খন্ডে প্রকাশিত। এটি ফার্সি ভাষায় আলী বিন আহমাদ আলগুরীর অনুবাদে প্রকাশিত। যিনি খাত্তা এলাকার বাসিন্দা। [কাশফুজ জুনুন-২/১৫১৭]
এই হল, কানযুল ইবাদ কিতাবের হালাত। কোন বুযুর্গ লিখেছেন? কোন উৎসমূল থেকে তা সংগ্রহ করেছেন? তার কিছুই জানা নেই। এমন একটি মাজহূল গ্রন্থে উদ্ধৃত বিষয় কি করে মুস্তাহাবের মত শরয়ী বিধানের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে?
ফাতাওয়া সূফিয়্যাহ
আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী রহঃ বলেনঃ
(( ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻱ ﺍﻟﺼﻮﻓﻴّﺔ (( ﻟﻔﻀﻞ ﺍﻟﻠﻪ [ ﺑﻦ ] ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﻳﻮﺏ، ﺗﻠﻤﻴﺬ )) ﺟﺎﻣﻊ ﺍﻟﻤﻀﻤﺮﺍﺕ (( ﻛﻤﺎ ﻧﻘﻠﻪ ﺻﺎﺣﺐ )) ﺍﻟﻜﺸﻒ (( ﻋﻦ ﺍﻟﺒِﺮْﻛِﻠﻲّ ﺃﻧّﻪ ﻗﺎﻝ : ﺇﻧّﻬﺎ ﻟﻴﺴﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﺍﻟﻤﻌﺘﺒﺮﺓ، ﻓﻼ ﻳﺠﻮﺯُ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻤﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﺇﻻ ﺇﺫﺍ ﻋﻠﻢَ ﻣﻮﺍﻓﻘﺘﻬﺎ ﻟﻸﺻﻮﻝ .
“জামেউল মুজমারাত” গ্রন্থ প্রণেতার ছাত্র ফযল বিন মুহাম্মদ বিন আইয়্যুব এর কিতাব “ফাতাওয়া সূফিয়্যাহ” সম্পর্কে “কাশফুজ জুনুন” প্রণেতা বিরকিলিই এর বরাতে উল্লেখ করেছেনঃ নিশ্চয় এটি [ফাতাওয়া সুফিয়্যাহ] কোন গ্রহণযোগ্য কিতাব নয়। তাই এর মাঝে থাকা যেসব বিষয় উসূলে শরীয়তের সাথে না মিলে, এমন কথার উপর আমল করা যাবে না। [মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৫১, কাশফুজ জুনুন-২/১২২৫]
কুহুস্তানী
ﻭﺍﻟﻘُﻬُﺴْﺘَﺎﻧِﻲُّ ﻛﺠﺎﺭﻑِ ﺳﻴﻞ، ﻭﺣﺎﻃﺐ ﻟﻴﻞ ﺧﺼﻮﺻﺎً ﻭﺍﺳﺘﻨﺎﺩﻩ ﺇﻟﻰ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﺰﺍﻫﺪﻱّ ﺍﻟﻤﻌﺘﺰﻟﻲّ . ﺍﻧﺘﻬﻰ
আল্লামা শামী রহঃ বলেনঃ কুহুস্তানী হল, স্রোতে ভেসে যাওয়া এবং অন্ধকারে লাকড়ি সংগ্রহকারী। বিশেষ করে তিনি যখনি যাহেদ মু’তাজিলীর কিতাব থেকে কোন কথা গ্রহণ করে। [তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যাহ-২/৩২৪, মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৪৮]
মোল্লা আলী কারী হানাফী রহঃ কুহুস্তানী সম্পর্কে বলেনঃ
ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﺎﺭﻱ ﺍﻟﻤﻜﻲّ ﻓﻲ ﺭﺳﺎﻟﺘِﻪ : )) ﺷﻢ ﺍﻟﻌﻮﺍﺭﺽ ﻓﻲ ﺫﻡ ﺍﻟﺮﻭﺍﻓﺾ :(( ﻟﻘﺪ ﺻﺪﻕَ ﻋﺼﺎﻡُ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﺣﻖّ ﺍﻟﻘُﻬُﺴْﺘَﺎﻧِﻲّ ﺃﻧّﻪ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﻦ ﺗﻼﻣﻴﺬ ﺷﻴﺦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺍﻟﻬَﺮَﻭﻱ، ﻻ ﻣﻦ ﺃﻋﺎﻟﻴﻬﻢ، ﻭﻻ ﻣﻦ ﺃﺩﺍﻧﻴﻬﻢ، ﻭﺇﻧّﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﺩﻻّﻝ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻓﻲ ﺯﻣﺎﻧﻪ، ﻭﻻ ﻛﺎﻥ ﻳُﻌﺮﻑ ﺑﺎﻟﻔﻘﻪ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﺑﻴﻦ ﺃﻗﺮﺍﻧﻪ، ﻭﻳﺆﻳّﺪُﻩ ﺃﻧّﻪ ﻳﺠﻤﻊَ ﻓﻲ )) ﺷﺮﺣِﻪ (( ﻫﺬﺍ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻐﺚ ﻭﺍﻟﺴﻤﻴﻦ، ﻭﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻭﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺗﺤﻘﻴﻖ ﻭﺗﺪﻗﻴﻖ، ﻓﻬﻮ ﻛﺤﺎﻃﺐ ﺍﻟﻠﻴﻞ، ﺍﻟﺠﺎﻣﻊِ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺮﻃﺐ ﻭﺍﻟﻴﺎﺑﺲ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻴﻞ . ﺍﻧﺘﻬﻰ.
মোল্লা আলী কারী আলমক্কী তার রিসালা “শাম্মুল আওয়ারিজ ফী জাম্মির রাওয়াফিজ” নামক গ্রন্থে লিখেনঃ ইসামুদ্দীন সাহেব কুহুস্তানীর বিষয়ে হক কথা বলেছেনঃ যে, তিনি আসলে শাইখুল ইসলাম আলহারওয়ী এর বড় ছোট কোন ছাত্রের মাঝেই অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। বরং তিনি তার সময়কালে [ফিরাক্বে বাতিলার] কিতাবের দালাল ছিলেন। তিনি তার সময়কালে ফিক্বহ বা অন্য কোন বিষয়ে প্রসিদ্ধ ছিলেন না। [ইমামুদ্দীন সাহেবের কথাটি] এ বিষয়টি আরো শক্তিশালী করে তার এই শরহে মুখতাসারুল বিকায়া [অর্থাৎ জামিউর রূমূজ] কিতাবে তাহকীক ছাড়াই গলত, সহীহ, সঠিক বেঠিক সব ধরণের কথা একত্রিত করা দেখে। তিনি যেন রাত্রের ঐ লাকড়ি একত্রকারীর মত, যে রাতের অন্ধকারে ভিজা শুকনা সব ধরণের লাকড়ি সংগ্রহ করে যায়। [মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৪৮]
এসব কথা জানার পরও কুহুস্তানী কিতাবের রেফারেন্স কিভাবে উপস্থাপন করে বিদআতি বন্ধুরা? অথচ এ বিষয়ে কোন বিশুদ্ধ হাদীসের টিকিটিও পাওয়া যায় না।
ফাতাওয়া শামী লেখকের মন্তব্যঃ
ইবনে আবেদীন শামী রহঃ আঙ্গুল চুমু খাওয়া সংক্রান্ত দলীল কানযুল ইবাদ, ফাতাওয়া সুফিয়া, কুহুস্তানী এবং বাহরুর রায়েকের উদ্ধৃতিতে নকল করার পর উল্লেখ করেনঃ
ﻭَﺫَﻛَﺮَ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟْﺠِﺮَﺍﺣِﻲُّ ﻭَﺃَﻃَﺎﻝَ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺼِﺢَّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺮْﻓُﻮﻉِ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻫَﺬَﺍ ﺷَﻲْﺀٌ .
এসব জিরাহী ও উল্লেখ করেছেন ও দীর্ঘ আলোচনা করেছেন, তারপর লিখেনঃ এসবের [আঙ্গুল চুমু খেয়ে চোখে লাগানো] কোন দলীলই মারফূ নয়। [ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৩৭০]
আঙ্গুল চুমু খেয়ে চোখে মোছার কথাগুলো যেমন ইবনে আবেদীন রহঃ উল্লেখ করছেন, তেমনি শেষে এসবের কোনটিই যে বিশুদ্ধ নয়, তাও উল্লেখ করে দিয়ে তিনি তার অবস্থান পরিস্কার করে দিয়েছেন। তারপরও ইমাম শামী রহঃ উক্ত কাজের প্রবক্তা বলা কতটা খিয়ানত তা ভাবা যায়?
জালালাইনের হাশিয়ার মন্তব্য
ﻭﻳﻜﺮﻩ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﻈﻔﺮﻳﻦ ﻭﻭﺿﻌﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﻴﻨﻴﻦ ﻻﻧﻪ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﻓﻴﻪ ﻭﺍﻟﺬﻯ ﻭﺭﺩ ﻓﻴﻪ ﻟﻴﺲ ﺑﺼﺤﻴﺢ ( ﺗﻌﻠﻴﻘﺎﺕ ﺟﺪﻳﺪﺓ ﺣﺎﺷﻴﺔ ﺟﻼﻟﻴﻦ 357-
আঙ্গুলের নখ চুমু দেয়া এবং চোখে লাগানো মাকরূহ। কেননা, এর কোন প্রমাণ নেই। আর যেসব বর্ণনা এর স্বপক্ষে পেশ করা হয়, এর কোন কোনটিই সঠিক নয়। [জালালাইনের হাশিয়া-৩৫৭]
কিতাবুল ফিরদাউস এবং আলমাকাসিদুল হাসানাহ!
আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বন্ধুরা সবচে’ বেশি দলীল দিতে দেখা যায় আল্লামা সাখাবী রহঃ এর কিতাব “আলমাকাসিদুল হাসানাহ ফী বায়ানি কাছিরিম মিনাল আহাদীসিল মুশতাহারাহ আলাল আলছিনাহ” নামক গ্রন্থ থেকে। অথচ উক্ত কিতাবে যদিও অনেক বর্ণনা এ প্রসঙ্গে আনা হয়েছে। কিন্তু কোনটিই সংকলক ইমাম সাখাবী সহীহ বলেননি। বরং প্রতিটি বর্ণনাকেই অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।
১
ﺫَﻛَﺮَﻩُ ﺍﻟﺪَّﻳْﻠَﻤِﻲُّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻔِﺮْﺩَﻭْﺱِ ﻣِﻦْ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﺃَﺑِﻲ ﺑَﻜْﺮٍ ﺍﻟﺼِّﺪِّﻳﻖِ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﻤَّﺎ ﺳَﻤِﻊَ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻗَﺎﻝَ ﻫَﺬَﺍ، ﻭَﻗَﺒَّﻞَ ﺑَﺎﻃِﻦَ ﺍﻷُﻧْﻤُﻠَﺘَﻴْﻦِ ﺍﻟﺴَّﺒَّﺎﺑَﺘَﻴْﻦِ ﻭَﻣَﺴَﺢَ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ ﻣِﺜْﻞَ ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻞَ ﺧَﻠِﻴﻠِﻲ ﻓَﻘَﺪْ ﺣَﻠَّﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻲ، ﻭﻻ ﻳﺼﺢ
দায়লামী ফিরদাউস নামক কিতাবে লিখেছেন যে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাঃ মুআজ্জিনের মুখ থেকে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” শুনে হুবহু তা বললেন। তারপর শাহাদত আঙ্গুলের ভিতরের অংশে চুমু খেলেন এবং উভয় চোখ মাসাহ করলেন। এ কর্ম দেখে রাসূল সাঃ বললেন, যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর অনূরূপ কাজ করবে তার জন্য সুপারিশ করা আমার উপর অপরিহার্য।
আল্লামা সাখাবী বলেনঃ এ বর্ণনা সহীহ নয়। [মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪০-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯]
বর্ণনা আনার পর পরই আল্লামা সাখাবী রহঃ এর “বর্ণনাটি সহীহ নয়” বলে দেয়ার মাধ্যমে পরিস্কার এটি জাল। জাল বলার পরও উক্ত বর্ণনা দলীল হিসেবে কিভাবে পেশ করা হয়?
২
ﻭﻛﺬﺍ ﻣﺎ ﺃﻭﺭﺩﻩ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﺃﺣﻤﺪ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺑﻜﺮ ﺍﻟﺮﺩﺍﺩ ﺍﻟﻴﻤﺎﻧﻲ ﺍﻟﻤﺘﺼﻮﻑ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ “ ﻣﻮﺟﺒﺎﺕ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﻋﺰﺍﺋﻢ ﺍﻟﻤﻐﻔﺮﺓ ” ﺑﺴﻨﺪ ﻓﻴﻪ ﻣﺠﺎﻫﻴﻞ ﻣﻊ ﺍﻧﻘﻄﺎﻋﻪ، ﻋﻦ ﺍﻟﺨﻀﺮ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺃﻧﻪ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺣﻴﻦ ﻳﺴﻤﻊ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻳﻘﻮﻝ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠَّﻪ : ﻣﺮﺣﺒﺎ ﺑﺤﺒﻴﺒﻲ ﻭﻗﺮﺓ ﻋﻴﻨﻲ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺛﻢ ﻳﻘﺒﻞ ﺇﺑﻬﺎﻣﻴﻪ ﻭﻳﺠﻌﻠﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﻋﻴﻨﻴﻪ ﻟﻢ ﻳﺮﻣﺪ ﺃﺑﺪﺍ ،
প্রথম বর্ণনার মত এটিও বিশুদ্ধ নয় যে, যা সূফী আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আবী বকর ইয়ামানী স্বীয় কিতাব “মুজিবাতুর রহমাহ ওয়া আজায়িমুল মাগফিরাহ” এ এমন সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যাতে রয়েছে অপরিচিত লোক এবং হযরত খিজির আঃ থেকে সূত্র বিচ্ছিন্নতাও বিদ্যমান। বর্ণনাটি হল, হযরত খিজির আঃ থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি মুআজ্জিনকে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনে বলবে “মারহাবান বিহাবীবী ওয়া কুররাতা আইনী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর তার উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলিকে চুমু খাবে, এবং তা রাখবে দুই চোখে, সে ব্যক্তির চোখ কখনো পীড়িত হবে না।
[মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯]
আশা করি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আল্লামা সাখাবী যেখানে মানুষের মুখে প্রচলিত হাদীসের আলোচনায় এমন একটি বর্ণনা এনে, তা বিশুদ্ধ নয়, এতে প্রচুর অপরিচিত ব্যক্তি আছে এবং তাতে রয়েছে সূত্রবিচ্ছিন্নতা, এসব কিছু বলার পরও উক্ত কিতাবের নামে এ বর্ণনা দলীল হিসেবে পেশ করা কত বড় প্রতারণা ভাবা যায়?
এরপর আল্লামা সাখাবী রহঃ আরো ৬/৭টি বর্ণনা তার আলমাকাসিদুল হাসানাহ গ্রন্থে এনেছেন। আনার পর পরিশেষে তিনি এসব বর্ণনা বিষয়ে মন্তব্য করেনঃ
ﻭﻻ ﻳﺼﺢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﻓﻮﻉ ﻣﻦ ﻛﻞ ﻫﺬﺍ ﺷﻲﺀ .
এখানের কোন বর্ণনাই হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয়। [আলমাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১, প্রকাশনী দারুল কুতুব, বাইরুত]
“হাদীসে মারফূ” দ্বারা প্রমাণিত নয় মানে কী?
বিদআতি বন্ধুরা ইমাম সাখাবী রহঃ এর মন্তব্য “হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয়” দ্বারা সাধারণ লোকদের একটি ধোঁকা দিয়ে থাকেন। সেটি হল এই যে, তারা বলেন “ইমাম সাখাবীর মত হল, এসব বিষয় মারফূ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, কিন্তু মাকতূ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
এটি একটি জলজ্যান্ত প্রতারণা। মূলত ইমাম সাখাবী রহঃ এর উক্ত কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, উক্ত বিষয় মূলত কোন প্রকার হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত নয়। পুরোটাই বানোয়াট।
যা পরিস্কার হয়ে যায় “আলমাকাসিদুল হাসানাহ” গ্রন্থের উক্ত কথাটির টিকা দেখলেই। টিকায় মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দীক আলআজহারী আলগুমারী লিখেনঃ
ﻭﺣﻜﻰ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻓﻲ ﺷﺮﺡ ﻣﺨﺘﺼﺮﻩ ﺧﻠﻴﻞ ﺣﻜﺎﻳﺔ ﺃﺧﺮﻯ ﻏﻴﺮ ﻣﺎ ﻫﻨﺎ، ﻭﺗﻮﺳﻊ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ، ﻭﻻ ﻳﺼﺢ ﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﻓﻮﻉ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺆﻟﻒ، ﺑﻞ ﻛﻠﻪ ﻣﺨﺘﻠﻖ ﻣﻮﺿﻮﻉ . [ ﻁ ﺍﻟﺨﺎﻧﺠﻲ
খাত্তাব শরহে মুখতাছারাহ খলীল নামক গ্রন্থে এখানে উদ্ধৃত হয়নি এমন আরেকটি ঘটনা নকল করেছেন। আর তিনি এ বিষয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। অথচ এর মাঝের কোনটিই হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয় বরং সব ক’টিই হল মনগড়া ও বানোয়াট। [তা’লীকে আলমাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১-৪৪২, মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দীক আলগুমারী]
মোল্লা আলী কারী রহঃ এর মন্তব্যঃ
মোল্লা আলী কারী রহঃ দায়লামীর “আলফিরদাউস” কিতাবের বরাতে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর দিকে নিসবত করা আঙ্গুলে চুমু খাওয়া সংক্রান্ত ঘটনাটি উদ্ধৃত করার পর আল্লামা সাখাবী রহঃ এর মন্তব্য উল্লেখ করেনঃ
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺴﺨﺎﻭﻯ : ﻻ ﻳﺼﺢ، ﻭﺃﻭﺭﺩﻩ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﺣﻤﺪ ﺍﻟﺮﺩﺍﺩ ﻓﻰ ﻛﺘﺎﺑﻪ ﻣﻮﺟﺒﺎﺕ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ” ﺑﺴﻨﺪ ﻓﻴﻪ ﻣﺠﺎﻫﻴﻞ ﻣﻊ ﺍﻧﻘﻄﺎﻋﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﺨﻀﺮ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ، ﻭﻛﻞ ﻣﺎ ﻳﺮﻭﻯ ﻓﻰ ﻫﺬﺍ ﻓﻼ ﻳﺼﺢ ﺭﻓﻌﻪ ﺍﻟﺒﺘﺔ
ﻗﻠﺖ : ﻭﺍﺫﺍ ﺛﺒﺖ ﺭﻓﻌﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺪﻳﻖ ﻓﻴﻜﻔﻰ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻪ
সাখাবী বলেন, এটি বিশুদ্ধ নয়। আর শায়খ আহমাদ আররদাদ স্বীয় কিতাব “মুজিবাতুর রহমাহ” এ এমন সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যাতে রয়েছে অপরিচিত লোক এবং হযরত খিজির আঃ পর্যন্ত সূত্র বিচ্ছিন্নতাও বিদ্যমান। এ বিষয়ে যা কিছু বর্ণিত এর কোনটিই রাসূল সাঃ এর ফরমান হওয়া প্রমাণিত নয়।
আমি বলি, যদি আবু বকর সিদ্দীক রাঃ পর্যন্ত এর সনদ সহীহ হতো, তাহলে এর উপর আমল করা সঠিক হতো। [আলমওজুআতুল কুবরা, মোল্লা আলী কারী-২১০, বর্ণনা নং-৮২৯]
কিন্তু আফসোস! এ সংক্রান্ত কোন বর্ণনাকেই মুহাদ্দিসগণ বিশুদ্ধ বলে রায় দেননি। তাই এ আমলটি একটি মনগড়া ও বানোয়াট আমলই প্রমাণিত হয়।
একটি যুক্তি
বাইয়াতে রিজওয়ানে রাসূল সাঃ স্বীয় বাম হাতকে হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করে, স্বীয় ডান হাতের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরামের বাইয়াত গ্রহণ করেছেন।
নবীজী সাঃ নিজের হাতকে যেহেতু হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করে বাইয়াত নিতে পারেন, তাহলে আমরা কেন আজানের সময় রাসূল সাঃ এর নামের সময় স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলিকে রাসূল সাঃ এর আঙ্গুল মনে করে চুমু খেতে পারবো না? [উৎসঃ ইশতিহার ওয়াজিবুল ই’তিবার, লেখক, মৌলভী মুখতার আহমাদ, কানপুর থেকে প্রকাশিত]
আমাদের জবাব
গায়রে মুজতাহিদ যখন মুজতাহিদের ভাব ধরে, তখন এমন ভয়ানক ইজতিহাদই করবে, এটাই স্বাভাবিক। রাসূল সাঃ বাইয়াতে রিজওয়ানে স্বীয় হাতকে হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করেছেন রূপক অর্থে। আর উক্ত কাজটি তিনি করেছেন আল্লাহর অহী অনুপাতে। কারণ রাসূল সাঃ এর কর্ম অহীয়ে গায়রে মাতলু। আর উক্ত বিষয়টি কুরআনে পরিস্কার বর্ণিত হয়েছে।
বিদআতি বন্ধুরা কি নিজেদের নবীজী সাঃ এর মত মনে করেন নাকি? স্বীয় পাপিষ্ঠ হাতের আঙ্গুলকে নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল মনে করা কত বড় ধৃষ্ঠতা ভাবা যায়? আর এ ধৃষ্ঠতার নাম নাকি মুহাব্বতে রাসূল! বড়ই আজীব মানসিকতা তাদের।
মজার বিষয় হল, আঙ্গুল চুমুদাতা বন্ধুরা নিজের আঙ্গুলকে নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার পর, সেই সম্মান প্রদর্শন করেন, যা হযরত উসমান রাঃ করেছিলেন? হযরত উসমান রাঃ তো রাসূল সাঃ এর হাতে যে হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন, সেই হাত দ্বারা মৃত্যু পর্যন্ত আর লজ্জাস্থান স্পর্শ করেননি। [সুনানে ইবনে মাজাহ-২৭]
কিন্তু নবীর আশেক দাবিদার এসব বন্ধুরা স্বীয় আঙ্গুলকে নবীর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার পর, তারা কি উক্ত সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন? নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্তকৃত অঙ্গ দ্বারা নাপাক স্থানে হাত রাখা কত বড় বেআদবের কাজ একবার ভেবে দেখার সময় হবে কি?
কোন অহীর বিধানের ভিত্তিতে স্বীয় নাপাক আঙ্গুলকে রাসূল সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার ধৃষ্ঠতা দেখায় এসব বিদআতিরা?
ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজেঊন।
জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ এর বক্তব্য
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﻠﺘﻰ ﺭﻭﻳﺖ ﻓﻰ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻻﻧﺎﻣﻴﻞ ﻭﺟﻌﻠﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﻴﻨﻴﻦ ﻋﻨﻪ ﺳﻤﺎﻉ ﺍﺳﻤﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻓﻰ ﻛﻠﻤﺔ ﺍﻟﺸﻬﺎﺩﺓ ﻛﻠﻬﺎ ﻣﻮﺿﻮﻋﺎﺕ ( ﺗﻴﺴﻴﺮ ﺍﻟﻤﻘﺎﻝ ﻟﻠﺴﻴﻮﻃﻰ 123- )
মুআজ্জিনের মুখে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে আঙ্গুল চুমু খাওয়া এবং তা চোখের উপর রাখা সংক্রান্ত যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল-বানোয়াট। {তাইসীরুল মাক্বাল লিস সুয়ূতী-১২৩}
আব্দুল হাই লাক্ষ্ণেৌবী রহঃ এর মন্তব্যঃ
ﻭﺍﻟﺤﻖ ﺍﻥ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﻈﻔﺮﻳﻦ ﻋﻨﺪ ﺳﻤﺎﻉ ﺍﻻﺳﻢ ﺍﻟﻨﺒﻮﻯ ﻓﻰ ﺍﻻﻗﺎﻣﺔ ﻭﻏﻴﺮﻫﺎ ﻛﻠﻤﺎ ﺫﻛﺮ ﺍﺳﻤﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻣﻤﺎ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﻓﻴﻪ ﺧﺒﺮ ﻭﻻ ﺍﺛﺮ ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺑﻪ ﻓﻬﻮ ﺍﻟﻤﻔﺘﺮﻯ ﺍﻻﻛﺒﺮ ﻓﻬﻮ ﺑﺪﻋﺔ ﺷﻨﻴﻌﺔ ﺳﻴﺌﺔ ﻻ ﺍﺻﻞ ﻟﻬﺎ ﻓﻰ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﺩﻋﻰ ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺍﻟﺒﻴﺎﻥ ( ﺍﻟﺴﻌﺎﻳﺔ - 1/46 )
সত্য কথা হল, রাসূল সাঃ এর নাম একামত বা অন্য কোন স্থানে শুনার পর আঙ্গুল চুমু খাওয়ার ব্যাপারে না কোন হাদীসে নববী [বিশুদ্ধ সূত্র অনুপাতে] আছে, না কোন সাহাবীর আমল বা বক্তব্য [বিশুদ্ধ সূত্রে] বর্ণিত আছে। তাই যে ব্যক্তি এ আমলের প্রবক্তা, সে ব্যক্তি অনেক বড় অপবাদ আরোপকারী। তাই একাজ ঘৃণ্য ধরণের বিদআত। শরয়ী গ্রন্থাবলীতে যার কোন ভিত্তি নেই। যে এসব কথা বলে, তার উচিত [সহীহ] প্রমাণ পেশ করা। [আসসিয়ায়া-১/৪৬]
শেষ কথা
উপরের দীর্ঘ আলোচনা ও তথ্য প্রমাণ দ্বারা আশা করি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, আজানের সময় বা অন্য সময় রাসূল সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মোছা সম্পর্কিত কোন বর্ণনাই সহীহ নয়। সবই মনগড়া ও বানোয়াট।
তাই এ কাজকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত। কিন্তু সুন্নত বা মুস্তাহাব না মনে করে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া এমনিতেই যদি কোন ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর নাম শুনে মুহাব্বতে করে থাকে, তাহলে এটিকে বিদআত বলা যাবে না। কারণ তখন এটি আর বিদআতের সংজ্ঞায় থাকে না। কারণ বিদআত হবার জন্য তা সওয়াবের কাজ, বা সুন্নাত মুস্তাহাব ইত্যাদি মনে করতে হয়।
আবারো বলছি! একাজকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করলে তা পরিস্কার হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। মোহাব্বতের নামে বিদআতী ও আমলের নামে শিরকী কাজ করা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।
ইদানিং আজানের সময় “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” শব্দ শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মোছা বিষয়ে বেশ বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে পরিস্কার ধারণা পেতে অনেকে অনুরোধ করছেন। সেই হিসেবে এ বিষয়ে অল্প সময়ে কিছু তথ্যাদি উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হল।
হাদীসের কোন গ্রহণযোগ্য কিতাবে আজানের সময় আঙ্গুল চুমু খাওয়া ও চোখে মোছা সম্পর্কিত কোন কথা বর্ণিত হয়নি।
আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বন্ধুরা যেসব কিতাব থেকে উক্ত মাসআলাটির প্রমাণ পেশ করার চেষ্টা করে থাকেন, তা মূলত কয়েকটি। যথা-
১
কানযুল ইবাদ।
২
ফাতাওয়ায়ে সূফিয়া।
৩
কুহুস্তানী রহঃ এর লিখা জামেউর রূমূজ।
৪
কিতাবুল ফিরদাউস।
মূল উৎস এ ৪টি গ্রন্থ। যে ৪ কিতাবের রেফারেন্সে তা আনা হয়েছে, ফাতাওয়া শামী, তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ, তাফসীরে রূহুল বয়ান, আলবাহরুর রায়েক এবং জালালাইনের হাশিয়ায়।
তাহলে মূল উৎস কিন্তু ৪টিই থাকছে। পরবর্তী কিতাব তথা ফাতাওয়া শামী, মারাকিল ফালাহ ইত্যাদি গ্রন্থে উল্লেখ হওয়া মানে আলাদা হয়ে যাওয়া নয়। বরং মূল প্রমাণ্য উক্ত কয়েকটি কিতাবই থাকে। এবার আমরা দেখবো উপরোক্ত কিতাবগুলোতে বর্ণিত সব কথাই কি গ্রহণযোগ্য? নাকি তাহকীক করতে হবে?
কানযুল ইবাদ
ﻛﻨﺰ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩ، ﻓﻲ ﺷﺮﺡ ﺍﻷﻭﺭﺍﺩ
ﻳﻌﻨﻲ : ﺃﻭﺭﺍﺩ ﺍﻟﺸﻴﺦ، ﺍﻷﺟﻞ، ﻣﺤﻴﻲ ﺍﻟﺴﻨﺔ : ﺷﻬﺎﺏ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﺴﻬﺮﻭﺭﺩﻱ .
ﻭﺍﻟﺸﺮﺡ : ﻟﺒﻌﺾ ﺍﻟﻤﺸﺎﻳﺦ . ﻓﻲ ﻣﺠﻠﺪ . ﻣﻨﻘﻮﻝ ﻣﻦ : ﻛﺘﺐ ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻯ، ﻭﺍﻟﻮﺍﻗﻌﺎﺕ .
ﻭﻫﻮ : ﺷﺮﺡ ﻓﺎﺭﺳﻲ : ﺑﻘﻮﻟﻪ . ﻟﻌﻠﻲ ﺑﻦ ﺃﺣﻤﺪ ﺍﻟﻐﻮﺭﻱ، ﺍﻟﺴﺎﻛﻦ ﺑﺨﻄﺔ : ﻛﺮﻩ .
কানযুল ইবাদ ফী শরহিল আওরাদ অর্থাৎ আওরাদুশ শায়খুল আজল মুহিউস সুন্নাহ শিহাবুদ্দীন আসসাহরাওয়ার্দীর ওযীফা এবং মালফুজাত কোন বুযুর্গ ব্যক্তি লিখেছেন। যা ফাতাওয়ার কিতাব ও জীবনী গ্রন্থ থেকে নেয়া। এক খন্ডে প্রকাশিত। এটি ফার্সি ভাষায় আলী বিন আহমাদ আলগুরীর অনুবাদে প্রকাশিত। যিনি খাত্তা এলাকার বাসিন্দা। [কাশফুজ জুনুন-২/১৫১৭]
এই হল, কানযুল ইবাদ কিতাবের হালাত। কোন বুযুর্গ লিখেছেন? কোন উৎসমূল থেকে তা সংগ্রহ করেছেন? তার কিছুই জানা নেই। এমন একটি মাজহূল গ্রন্থে উদ্ধৃত বিষয় কি করে মুস্তাহাবের মত শরয়ী বিধানের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে?
ফাতাওয়া সূফিয়্যাহ
আল্লামা আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী রহঃ বলেনঃ
(( ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻱ ﺍﻟﺼﻮﻓﻴّﺔ (( ﻟﻔﻀﻞ ﺍﻟﻠﻪ [ ﺑﻦ ] ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﻳﻮﺏ، ﺗﻠﻤﻴﺬ )) ﺟﺎﻣﻊ ﺍﻟﻤﻀﻤﺮﺍﺕ (( ﻛﻤﺎ ﻧﻘﻠﻪ ﺻﺎﺣﺐ )) ﺍﻟﻜﺸﻒ (( ﻋﻦ ﺍﻟﺒِﺮْﻛِﻠﻲّ ﺃﻧّﻪ ﻗﺎﻝ : ﺇﻧّﻬﺎ ﻟﻴﺴﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﺍﻟﻤﻌﺘﺒﺮﺓ، ﻓﻼ ﻳﺠﻮﺯُ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻤﺎ ﻓﻴﻬﺎ ﺇﻻ ﺇﺫﺍ ﻋﻠﻢَ ﻣﻮﺍﻓﻘﺘﻬﺎ ﻟﻸﺻﻮﻝ .
“জামেউল মুজমারাত” গ্রন্থ প্রণেতার ছাত্র ফযল বিন মুহাম্মদ বিন আইয়্যুব এর কিতাব “ফাতাওয়া সূফিয়্যাহ” সম্পর্কে “কাশফুজ জুনুন” প্রণেতা বিরকিলিই এর বরাতে উল্লেখ করেছেনঃ নিশ্চয় এটি [ফাতাওয়া সুফিয়্যাহ] কোন গ্রহণযোগ্য কিতাব নয়। তাই এর মাঝে থাকা যেসব বিষয় উসূলে শরীয়তের সাথে না মিলে, এমন কথার উপর আমল করা যাবে না। [মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৫১, কাশফুজ জুনুন-২/১২২৫]
কুহুস্তানী
ﻭﺍﻟﻘُﻬُﺴْﺘَﺎﻧِﻲُّ ﻛﺠﺎﺭﻑِ ﺳﻴﻞ، ﻭﺣﺎﻃﺐ ﻟﻴﻞ ﺧﺼﻮﺻﺎً ﻭﺍﺳﺘﻨﺎﺩﻩ ﺇﻟﻰ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﺰﺍﻫﺪﻱّ ﺍﻟﻤﻌﺘﺰﻟﻲّ . ﺍﻧﺘﻬﻰ
আল্লামা শামী রহঃ বলেনঃ কুহুস্তানী হল, স্রোতে ভেসে যাওয়া এবং অন্ধকারে লাকড়ি সংগ্রহকারী। বিশেষ করে তিনি যখনি যাহেদ মু’তাজিলীর কিতাব থেকে কোন কথা গ্রহণ করে। [তানকীহুল ফাতাওয়াল হামিদিয়্যাহ-২/৩২৪, মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৪৮]
মোল্লা আলী কারী হানাফী রহঃ কুহুস্তানী সম্পর্কে বলেনঃ
ﻭﻗﺎﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻘﺎﺭﻱ ﺍﻟﻤﻜﻲّ ﻓﻲ ﺭﺳﺎﻟﺘِﻪ : )) ﺷﻢ ﺍﻟﻌﻮﺍﺭﺽ ﻓﻲ ﺫﻡ ﺍﻟﺮﻭﺍﻓﺾ :(( ﻟﻘﺪ ﺻﺪﻕَ ﻋﺼﺎﻡُ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻓﻲ ﺣﻖّ ﺍﻟﻘُﻬُﺴْﺘَﺎﻧِﻲّ ﺃﻧّﻪ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﻦ ﺗﻼﻣﻴﺬ ﺷﻴﺦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺍﻟﻬَﺮَﻭﻱ، ﻻ ﻣﻦ ﺃﻋﺎﻟﻴﻬﻢ، ﻭﻻ ﻣﻦ ﺃﺩﺍﻧﻴﻬﻢ، ﻭﺇﻧّﻤﺎ ﻛﺎﻥ ﺩﻻّﻝ ﺍﻟﻜﺘﺐ ﻓﻲ ﺯﻣﺎﻧﻪ، ﻭﻻ ﻛﺎﻥ ﻳُﻌﺮﻑ ﺑﺎﻟﻔﻘﻪ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﺑﻴﻦ ﺃﻗﺮﺍﻧﻪ، ﻭﻳﺆﻳّﺪُﻩ ﺃﻧّﻪ ﻳﺠﻤﻊَ ﻓﻲ )) ﺷﺮﺣِﻪ (( ﻫﺬﺍ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻐﺚ ﻭﺍﻟﺴﻤﻴﻦ، ﻭﺍﻟﺼﺤﻴﺢ ﻭﺍﻟﻀﻌﻴﻒ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺗﺤﻘﻴﻖ ﻭﺗﺪﻗﻴﻖ، ﻓﻬﻮ ﻛﺤﺎﻃﺐ ﺍﻟﻠﻴﻞ، ﺍﻟﺠﺎﻣﻊِ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺮﻃﺐ ﻭﺍﻟﻴﺎﺑﺲ ﻓﻲ ﺍﻟﻠﻴﻞ . ﺍﻧﺘﻬﻰ.
মোল্লা আলী কারী আলমক্কী তার রিসালা “শাম্মুল আওয়ারিজ ফী জাম্মির রাওয়াফিজ” নামক গ্রন্থে লিখেনঃ ইসামুদ্দীন সাহেব কুহুস্তানীর বিষয়ে হক কথা বলেছেনঃ যে, তিনি আসলে শাইখুল ইসলাম আলহারওয়ী এর বড় ছোট কোন ছাত্রের মাঝেই অন্তর্ভূক্ত ছিলেন না। বরং তিনি তার সময়কালে [ফিরাক্বে বাতিলার] কিতাবের দালাল ছিলেন। তিনি তার সময়কালে ফিক্বহ বা অন্য কোন বিষয়ে প্রসিদ্ধ ছিলেন না। [ইমামুদ্দীন সাহেবের কথাটি] এ বিষয়টি আরো শক্তিশালী করে তার এই শরহে মুখতাসারুল বিকায়া [অর্থাৎ জামিউর রূমূজ] কিতাবে তাহকীক ছাড়াই গলত, সহীহ, সঠিক বেঠিক সব ধরণের কথা একত্রিত করা দেখে। তিনি যেন রাত্রের ঐ লাকড়ি একত্রকারীর মত, যে রাতের অন্ধকারে ভিজা শুকনা সব ধরণের লাকড়ি সংগ্রহ করে যায়। [মুকাদ্দিমায়ে উমদাতুর রিয়ায়াহ বিহাশিয়াতি শরহিল বিকায়া-১/৪৮]
এসব কথা জানার পরও কুহুস্তানী কিতাবের রেফারেন্স কিভাবে উপস্থাপন করে বিদআতি বন্ধুরা? অথচ এ বিষয়ে কোন বিশুদ্ধ হাদীসের টিকিটিও পাওয়া যায় না।
ফাতাওয়া শামী লেখকের মন্তব্যঃ
ইবনে আবেদীন শামী রহঃ আঙ্গুল চুমু খাওয়া সংক্রান্ত দলীল কানযুল ইবাদ, ফাতাওয়া সুফিয়া, কুহুস্তানী এবং বাহরুর রায়েকের উদ্ধৃতিতে নকল করার পর উল্লেখ করেনঃ
ﻭَﺫَﻛَﺮَ ﺫَﻟِﻚَ ﺍﻟْﺠِﺮَﺍﺣِﻲُّ ﻭَﺃَﻃَﺎﻝَ، ﺛُﻢَّ ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺼِﺢَّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤَﺮْﻓُﻮﻉِ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻫَﺬَﺍ ﺷَﻲْﺀٌ .
এসব জিরাহী ও উল্লেখ করেছেন ও দীর্ঘ আলোচনা করেছেন, তারপর লিখেনঃ এসবের [আঙ্গুল চুমু খেয়ে চোখে লাগানো] কোন দলীলই মারফূ নয়। [ফাতাওয়ায়ে শামী-১/৩৭০]
আঙ্গুল চুমু খেয়ে চোখে মোছার কথাগুলো যেমন ইবনে আবেদীন রহঃ উল্লেখ করছেন, তেমনি শেষে এসবের কোনটিই যে বিশুদ্ধ নয়, তাও উল্লেখ করে দিয়ে তিনি তার অবস্থান পরিস্কার করে দিয়েছেন। তারপরও ইমাম শামী রহঃ উক্ত কাজের প্রবক্তা বলা কতটা খিয়ানত তা ভাবা যায়?
জালালাইনের হাশিয়ার মন্তব্য
ﻭﻳﻜﺮﻩ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﻈﻔﺮﻳﻦ ﻭﻭﺿﻌﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﻴﻨﻴﻦ ﻻﻧﻪ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﻓﻴﻪ ﻭﺍﻟﺬﻯ ﻭﺭﺩ ﻓﻴﻪ ﻟﻴﺲ ﺑﺼﺤﻴﺢ ( ﺗﻌﻠﻴﻘﺎﺕ ﺟﺪﻳﺪﺓ ﺣﺎﺷﻴﺔ ﺟﻼﻟﻴﻦ 357-
আঙ্গুলের নখ চুমু দেয়া এবং চোখে লাগানো মাকরূহ। কেননা, এর কোন প্রমাণ নেই। আর যেসব বর্ণনা এর স্বপক্ষে পেশ করা হয়, এর কোন কোনটিই সঠিক নয়। [জালালাইনের হাশিয়া-৩৫৭]
কিতাবুল ফিরদাউস এবং আলমাকাসিদুল হাসানাহ!
আঙ্গুলে চুমু খাওয়া বন্ধুরা সবচে’ বেশি দলীল দিতে দেখা যায় আল্লামা সাখাবী রহঃ এর কিতাব “আলমাকাসিদুল হাসানাহ ফী বায়ানি কাছিরিম মিনাল আহাদীসিল মুশতাহারাহ আলাল আলছিনাহ” নামক গ্রন্থ থেকে। অথচ উক্ত কিতাবে যদিও অনেক বর্ণনা এ প্রসঙ্গে আনা হয়েছে। কিন্তু কোনটিই সংকলক ইমাম সাখাবী সহীহ বলেননি। বরং প্রতিটি বর্ণনাকেই অগ্রহণযোগ্য বলেছেন।
১
ﺫَﻛَﺮَﻩُ ﺍﻟﺪَّﻳْﻠَﻤِﻲُّ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻔِﺮْﺩَﻭْﺱِ ﻣِﻦْ ﺣَﺪِﻳﺚِ ﺃَﺑِﻲ ﺑَﻜْﺮٍ ﺍﻟﺼِّﺪِّﻳﻖِ ﺃَﻧَّﻪُ ﻟَﻤَّﺎ ﺳَﻤِﻊَ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻗَﺎﻝَ ﻫَﺬَﺍ، ﻭَﻗَﺒَّﻞَ ﺑَﺎﻃِﻦَ ﺍﻷُﻧْﻤُﻠَﺘَﻴْﻦِ ﺍﻟﺴَّﺒَّﺎﺑَﺘَﻴْﻦِ ﻭَﻣَﺴَﺢَ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ، ﻓَﻘَﺎﻝَ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ﻣَﻦْ ﻓَﻌَﻞَ ﻣِﺜْﻞَ ﻣَﺎ ﻓَﻌَﻞَ ﺧَﻠِﻴﻠِﻲ ﻓَﻘَﺪْ ﺣَﻠَّﺖْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺷَﻔَﺎﻋَﺘِﻲ، ﻭﻻ ﻳﺼﺢ
দায়লামী ফিরদাউস নামক কিতাবে লিখেছেন যে, হযরত আবূ বকর সিদ্দীক রাঃ মুআজ্জিনের মুখ থেকে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ” শুনে হুবহু তা বললেন। তারপর শাহাদত আঙ্গুলের ভিতরের অংশে চুমু খেলেন এবং উভয় চোখ মাসাহ করলেন। এ কর্ম দেখে রাসূল সাঃ বললেন, যে ব্যক্তি আমার বন্ধুর অনূরূপ কাজ করবে তার জন্য সুপারিশ করা আমার উপর অপরিহার্য।
আল্লামা সাখাবী বলেনঃ এ বর্ণনা সহীহ নয়। [মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪০-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯]
বর্ণনা আনার পর পরই আল্লামা সাখাবী রহঃ এর “বর্ণনাটি সহীহ নয়” বলে দেয়ার মাধ্যমে পরিস্কার এটি জাল। জাল বলার পরও উক্ত বর্ণনা দলীল হিসেবে কিভাবে পেশ করা হয়?
২
ﻭﻛﺬﺍ ﻣﺎ ﺃﻭﺭﺩﻩ ﺃﺑﻮ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﺃﺣﻤﺪ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺑﻜﺮ ﺍﻟﺮﺩﺍﺩ ﺍﻟﻴﻤﺎﻧﻲ ﺍﻟﻤﺘﺼﻮﻑ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ “ ﻣﻮﺟﺒﺎﺕ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ﻭﻋﺰﺍﺋﻢ ﺍﻟﻤﻐﻔﺮﺓ ” ﺑﺴﻨﺪ ﻓﻴﻪ ﻣﺠﺎﻫﻴﻞ ﻣﻊ ﺍﻧﻘﻄﺎﻋﻪ، ﻋﻦ ﺍﻟﺨﻀﺮ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺃﻧﻪ : ﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺣﻴﻦ ﻳﺴﻤﻊ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻳﻘﻮﻝ ﺃﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠَّﻪ : ﻣﺮﺣﺒﺎ ﺑﺤﺒﻴﺒﻲ ﻭﻗﺮﺓ ﻋﻴﻨﻲ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠَّﻪ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﺛﻢ ﻳﻘﺒﻞ ﺇﺑﻬﺎﻣﻴﻪ ﻭﻳﺠﻌﻠﻬﻤﺎ ﻋﻠﻰ ﻋﻴﻨﻴﻪ ﻟﻢ ﻳﺮﻣﺪ ﺃﺑﺪﺍ ،
প্রথম বর্ণনার মত এটিও বিশুদ্ধ নয় যে, যা সূফী আবুল আব্বাস আহমাদ বিন আবী বকর ইয়ামানী স্বীয় কিতাব “মুজিবাতুর রহমাহ ওয়া আজায়িমুল মাগফিরাহ” এ এমন সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যাতে রয়েছে অপরিচিত লোক এবং হযরত খিজির আঃ থেকে সূত্র বিচ্ছিন্নতাও বিদ্যমান। বর্ণনাটি হল, হযরত খিজির আঃ থেকে বর্ণিত। যে ব্যক্তি মুআজ্জিনকে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলতে শুনে বলবে “মারহাবান বিহাবীবী ওয়া কুররাতা আইনী মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তারপর তার উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলিকে চুমু খাবে, এবং তা রাখবে দুই চোখে, সে ব্যক্তির চোখ কখনো পীড়িত হবে না।
[মাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১, বর্ণনা নং-১০১৯]
আশা করি কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আল্লামা সাখাবী যেখানে মানুষের মুখে প্রচলিত হাদীসের আলোচনায় এমন একটি বর্ণনা এনে, তা বিশুদ্ধ নয়, এতে প্রচুর অপরিচিত ব্যক্তি আছে এবং তাতে রয়েছে সূত্রবিচ্ছিন্নতা, এসব কিছু বলার পরও উক্ত কিতাবের নামে এ বর্ণনা দলীল হিসেবে পেশ করা কত বড় প্রতারণা ভাবা যায়?
এরপর আল্লামা সাখাবী রহঃ আরো ৬/৭টি বর্ণনা তার আলমাকাসিদুল হাসানাহ গ্রন্থে এনেছেন। আনার পর পরিশেষে তিনি এসব বর্ণনা বিষয়ে মন্তব্য করেনঃ
ﻭﻻ ﻳﺼﺢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﻓﻮﻉ ﻣﻦ ﻛﻞ ﻫﺬﺍ ﺷﻲﺀ .
এখানের কোন বর্ণনাই হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয়। [আলমাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১, প্রকাশনী দারুল কুতুব, বাইরুত]
“হাদীসে মারফূ” দ্বারা প্রমাণিত নয় মানে কী?
বিদআতি বন্ধুরা ইমাম সাখাবী রহঃ এর মন্তব্য “হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয়” দ্বারা সাধারণ লোকদের একটি ধোঁকা দিয়ে থাকেন। সেটি হল এই যে, তারা বলেন “ইমাম সাখাবীর মত হল, এসব বিষয় মারফূ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, কিন্তু মাকতূ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
এটি একটি জলজ্যান্ত প্রতারণা। মূলত ইমাম সাখাবী রহঃ এর উক্ত কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, উক্ত বিষয় মূলত কোন প্রকার হাদীস দ্বারাই প্রমাণিত নয়। পুরোটাই বানোয়াট।
যা পরিস্কার হয়ে যায় “আলমাকাসিদুল হাসানাহ” গ্রন্থের উক্ত কথাটির টিকা দেখলেই। টিকায় মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দীক আলআজহারী আলগুমারী লিখেনঃ
ﻭﺣﻜﻰ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﻓﻲ ﺷﺮﺡ ﻣﺨﺘﺼﺮﻩ ﺧﻠﻴﻞ ﺣﻜﺎﻳﺔ ﺃﺧﺮﻯ ﻏﻴﺮ ﻣﺎ ﻫﻨﺎ، ﻭﺗﻮﺳﻊ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ، ﻭﻻ ﻳﺼﺢ ﺷﻲﺀ ﻣﻦ ﻫﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﺮﻓﻮﻉ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺆﻟﻒ، ﺑﻞ ﻛﻠﻪ ﻣﺨﺘﻠﻖ ﻣﻮﺿﻮﻉ . [ ﻁ ﺍﻟﺨﺎﻧﺠﻲ
খাত্তাব শরহে মুখতাছারাহ খলীল নামক গ্রন্থে এখানে উদ্ধৃত হয়নি এমন আরেকটি ঘটনা নকল করেছেন। আর তিনি এ বিষয়ে শিথিলতা প্রদর্শন করেছেন। অথচ এর মাঝের কোনটিই হাদীসে মারফূ দ্বারা প্রমাণিত নয় বরং সব ক’টিই হল মনগড়া ও বানোয়াট। [তা’লীকে আলমাকাসিদুল হাসানাহ-৪৪১-৪৪২, মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ সিদ্দীক আলগুমারী]
মোল্লা আলী কারী রহঃ এর মন্তব্যঃ
মোল্লা আলী কারী রহঃ দায়লামীর “আলফিরদাউস” কিতাবের বরাতে হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাঃ এর দিকে নিসবত করা আঙ্গুলে চুমু খাওয়া সংক্রান্ত ঘটনাটি উদ্ধৃত করার পর আল্লামা সাখাবী রহঃ এর মন্তব্য উল্লেখ করেনঃ
ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺴﺨﺎﻭﻯ : ﻻ ﻳﺼﺢ، ﻭﺃﻭﺭﺩﻩ ﺍﻟﺸﻴﺦ ﺍﺣﻤﺪ ﺍﻟﺮﺩﺍﺩ ﻓﻰ ﻛﺘﺎﺑﻪ ﻣﻮﺟﺒﺎﺕ ﺍﻟﺮﺣﻤﺔ ” ﺑﺴﻨﺪ ﻓﻴﻪ ﻣﺠﺎﻫﻴﻞ ﻣﻊ ﺍﻧﻘﻄﺎﻋﻪ ﻋﻦ ﺍﻟﺨﻀﺮ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ، ﻭﻛﻞ ﻣﺎ ﻳﺮﻭﻯ ﻓﻰ ﻫﺬﺍ ﻓﻼ ﻳﺼﺢ ﺭﻓﻌﻪ ﺍﻟﺒﺘﺔ
ﻗﻠﺖ : ﻭﺍﺫﺍ ﺛﺒﺖ ﺭﻓﻌﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﺪﻳﻖ ﻓﻴﻜﻔﻰ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﻪ
সাখাবী বলেন, এটি বিশুদ্ধ নয়। আর শায়খ আহমাদ আররদাদ স্বীয় কিতাব “মুজিবাতুর রহমাহ” এ এমন সনদের সাথে উল্লেখ করেছেন, যাতে রয়েছে অপরিচিত লোক এবং হযরত খিজির আঃ পর্যন্ত সূত্র বিচ্ছিন্নতাও বিদ্যমান। এ বিষয়ে যা কিছু বর্ণিত এর কোনটিই রাসূল সাঃ এর ফরমান হওয়া প্রমাণিত নয়।
আমি বলি, যদি আবু বকর সিদ্দীক রাঃ পর্যন্ত এর সনদ সহীহ হতো, তাহলে এর উপর আমল করা সঠিক হতো। [আলমওজুআতুল কুবরা, মোল্লা আলী কারী-২১০, বর্ণনা নং-৮২৯]
কিন্তু আফসোস! এ সংক্রান্ত কোন বর্ণনাকেই মুহাদ্দিসগণ বিশুদ্ধ বলে রায় দেননি। তাই এ আমলটি একটি মনগড়া ও বানোয়াট আমলই প্রমাণিত হয়।
একটি যুক্তি
বাইয়াতে রিজওয়ানে রাসূল সাঃ স্বীয় বাম হাতকে হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করে, স্বীয় ডান হাতের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরামের বাইয়াত গ্রহণ করেছেন।
নবীজী সাঃ নিজের হাতকে যেহেতু হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করে বাইয়াত নিতে পারেন, তাহলে আমরা কেন আজানের সময় রাসূল সাঃ এর নামের সময় স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলিকে রাসূল সাঃ এর আঙ্গুল মনে করে চুমু খেতে পারবো না? [উৎসঃ ইশতিহার ওয়াজিবুল ই’তিবার, লেখক, মৌলভী মুখতার আহমাদ, কানপুর থেকে প্রকাশিত]
আমাদের জবাব
গায়রে মুজতাহিদ যখন মুজতাহিদের ভাব ধরে, তখন এমন ভয়ানক ইজতিহাদই করবে, এটাই স্বাভাবিক। রাসূল সাঃ বাইয়াতে রিজওয়ানে স্বীয় হাতকে হযরত উসমান রাঃ এর হাত সাব্যস্ত করেছেন রূপক অর্থে। আর উক্ত কাজটি তিনি করেছেন আল্লাহর অহী অনুপাতে। কারণ রাসূল সাঃ এর কর্ম অহীয়ে গায়রে মাতলু। আর উক্ত বিষয়টি কুরআনে পরিস্কার বর্ণিত হয়েছে।
বিদআতি বন্ধুরা কি নিজেদের নবীজী সাঃ এর মত মনে করেন নাকি? স্বীয় পাপিষ্ঠ হাতের আঙ্গুলকে নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল মনে করা কত বড় ধৃষ্ঠতা ভাবা যায়? আর এ ধৃষ্ঠতার নাম নাকি মুহাব্বতে রাসূল! বড়ই আজীব মানসিকতা তাদের।
মজার বিষয় হল, আঙ্গুল চুমুদাতা বন্ধুরা নিজের আঙ্গুলকে নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার পর, সেই সম্মান প্রদর্শন করেন, যা হযরত উসমান রাঃ করেছিলেন? হযরত উসমান রাঃ তো রাসূল সাঃ এর হাতে যে হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন, সেই হাত দ্বারা মৃত্যু পর্যন্ত আর লজ্জাস্থান স্পর্শ করেননি। [সুনানে ইবনে মাজাহ-২৭]
কিন্তু নবীর আশেক দাবিদার এসব বন্ধুরা স্বীয় আঙ্গুলকে নবীর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার পর, তারা কি উক্ত সম্মান প্রদর্শন করে থাকেন? নবীজী সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্তকৃত অঙ্গ দ্বারা নাপাক স্থানে হাত রাখা কত বড় বেআদবের কাজ একবার ভেবে দেখার সময় হবে কি?
কোন অহীর বিধানের ভিত্তিতে স্বীয় নাপাক আঙ্গুলকে রাসূল সাঃ এর আঙ্গুল সাব্যস্ত করার ধৃষ্ঠতা দেখায় এসব বিদআতিরা?
ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্নাইলাইহি রাজেঊন।
জালালুদ্দীন সুয়ূতী রহঃ এর বক্তব্য
ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﻠﺘﻰ ﺭﻭﻳﺖ ﻓﻰ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻻﻧﺎﻣﻴﻞ ﻭﺟﻌﻠﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﻴﻨﻴﻦ ﻋﻨﻪ ﺳﻤﺎﻉ ﺍﺳﻤﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺆﺫﻥ ﻓﻰ ﻛﻠﻤﺔ ﺍﻟﺸﻬﺎﺩﺓ ﻛﻠﻬﺎ ﻣﻮﺿﻮﻋﺎﺕ ( ﺗﻴﺴﻴﺮ ﺍﻟﻤﻘﺎﻝ ﻟﻠﺴﻴﻮﻃﻰ 123- )
মুআজ্জিনের মুখে কালিমায়ে শাহাদাত পাঠকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শুনে আঙ্গুল চুমু খাওয়া এবং তা চোখের উপর রাখা সংক্রান্ত যত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সবই জাল-বানোয়াট। {তাইসীরুল মাক্বাল লিস সুয়ূতী-১২৩}
আব্দুল হাই লাক্ষ্ণেৌবী রহঃ এর মন্তব্যঃ
ﻭﺍﻟﺤﻖ ﺍﻥ ﺗﻘﺒﻴﻞ ﺍﻟﻈﻔﺮﻳﻦ ﻋﻨﺪ ﺳﻤﺎﻉ ﺍﻻﺳﻢ ﺍﻟﻨﺒﻮﻯ ﻓﻰ ﺍﻻﻗﺎﻣﺔ ﻭﻏﻴﺮﻫﺎ ﻛﻠﻤﺎ ﺫﻛﺮ ﺍﺳﻤﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻣﻤﺎ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﻓﻴﻪ ﺧﺒﺮ ﻭﻻ ﺍﺛﺮ ﻭﻣﻦ ﻗﺎﻝ ﺑﻪ ﻓﻬﻮ ﺍﻟﻤﻔﺘﺮﻯ ﺍﻻﻛﺒﺮ ﻓﻬﻮ ﺑﺪﻋﺔ ﺷﻨﻴﻌﺔ ﺳﻴﺌﺔ ﻻ ﺍﺻﻞ ﻟﻬﺎ ﻓﻰ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﺸﺮﻳﻌﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﺩﻋﻰ ﻓﻌﻠﻴﻪ ﺍﻟﺒﻴﺎﻥ ( ﺍﻟﺴﻌﺎﻳﺔ - 1/46 )
সত্য কথা হল, রাসূল সাঃ এর নাম একামত বা অন্য কোন স্থানে শুনার পর আঙ্গুল চুমু খাওয়ার ব্যাপারে না কোন হাদীসে নববী [বিশুদ্ধ সূত্র অনুপাতে] আছে, না কোন সাহাবীর আমল বা বক্তব্য [বিশুদ্ধ সূত্রে] বর্ণিত আছে। তাই যে ব্যক্তি এ আমলের প্রবক্তা, সে ব্যক্তি অনেক বড় অপবাদ আরোপকারী। তাই একাজ ঘৃণ্য ধরণের বিদআত। শরয়ী গ্রন্থাবলীতে যার কোন ভিত্তি নেই। যে এসব কথা বলে, তার উচিত [সহীহ] প্রমাণ পেশ করা। [আসসিয়ায়া-১/৪৬]
শেষ কথা
উপরের দীর্ঘ আলোচনা ও তথ্য প্রমাণ দ্বারা আশা করি পরিস্কার হয়ে গেছে যে, আজানের সময় বা অন্য সময় রাসূল সাঃ এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মোছা সম্পর্কিত কোন বর্ণনাই সহীহ নয়। সবই মনগড়া ও বানোয়াট।
তাই এ কাজকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত। কিন্তু সুন্নত বা মুস্তাহাব না মনে করে সওয়াবের নিয়ত ছাড়া এমনিতেই যদি কোন ব্যক্তি রাসূল সাঃ এর নাম শুনে মুহাব্বতে করে থাকে, তাহলে এটিকে বিদআত বলা যাবে না। কারণ তখন এটি আর বিদআতের সংজ্ঞায় থাকে না। কারণ বিদআত হবার জন্য তা সওয়াবের কাজ, বা সুন্নাত মুস্তাহাব ইত্যাদি মনে করতে হয়।
আবারো বলছি! একাজকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করলে তা পরিস্কার হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন। মোহাব্বতের নামে বিদআতী ও আমলের নামে শিরকী কাজ করা থেকে হিফাযত করুন। আমীন।
No comments:
Post a Comment