Latest Post

কওমীর স্বীকৃতি ও দেবিমূর্তি বিরোধী বক্তব্য আর রাজনৈতিক স্বার্থের ভেল্কিবাজি: মুহাম্মাদ মামুনুল হক

ঢাকা ১৩ই এপ্রিল'১৭ আজকের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রধান শিরোনাম দেখে মনে পড়ছে দুই হাজার ছয়ের কথা ৷ যখন হযরত শায়খুল হাদীস রহঃএর দলের...

Wednesday, March 29, 2017

খুকি ও কাঠবেড়ালি কবিতাটি পাঠ্যবই থেকে উধাও

মেহেদী হাসান:
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘খুকি ও কাঠবেড়ালি’ কবিতাটি নেই পাঠ্যবইয়ে। কবিতাটি এক সময় পাঠ্য ছিল এবং শিশুদের কাছে তো বটেই ছেলেবুড়ো সবার কাছেই ছিল অত্যন্ত প্রিয়। স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিশুরা হরমামেশা আবৃত্তি করত এ কবিতা। পাঠ্যবইয়ে কবিতাটি না থাকায় আক্ষেপ করছেন অনেক শিক্ষক অভিভাবক। তারা আক্ষেপ করছেন হৃদয়গ্রাহী, সুন্দর অর্থবোধক, ছন্দময় অনেক ছড়া কবিতার জন্য যা দীর্ঘকাল ধরে পাঠ্য ছিল কিন্তু এখন নেই। রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’, শেখ সাদীর ‘উত্তম ও অধম’, কালীপ্রসন্ন ঘোষের ‘পারিব না’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আত্মশক্তি’, বায়েজিদ বোস্তামীকে নিয়ে কালীদাস রায়ের ‘মাতৃভক্তি’, সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘বাংলাদেশ’সহ অনেক কবিতার কথা এখনো ভুলতে পারছেন না অনেকে। এক সময় কবি গোলাম মোস্তফার একাধিক শিশুতোষ কবিতা পাঠ্য ছিল বিভিন্ন শ্রেণীতে। বর্তমানে শুধু নবম-দশম শ্রেণীতে গোলাম মোস্তফার ‘জীবন বিনিময়’ নামে একটি কবিতা পাঠ্য রয়েছে। এভাবে বাংলাদেশের অনেক নামকরা কবির ছড়া, কবিতা পাঠ্যবই থেকে ক্রমে উধাও হয়ে গেছে যা অনেকে আজো ভুলতে পারছেন না।
অথচ বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণীতে বেশ কিছু এমন ছড়া কবিতা পাঠ্য করা হয়েছে যার কোনো অর্থ নেই, ছন্দ নেই। ফলে শিশুদের জন্য এতে যেমন নেই শিক্ষণীয় কিছু তেমনি এসব ছড়া-কবিতা মনে রাখাও কষ্টকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। পাঠ্যবইয়ের এই অবস্থা অতীতে কখনো ছিল না। এক সময় পাঠ্যবইয়ে এমনসব অর্থবহ, ছন্দময়, হৃদয়গ্রাহী ছড়া কবিতা ছিল যে, বর্তমানে ৬০-৭০ বছর বয়সী অনেক লোক ৪০-৫০ বছর আগে পড়া অনেক ছড়া কবিতা অনর্গল বলতে পারেন। কিন্তু ২৫-৩০ বছর বয়সী অনেক যুবকও সেভাবে বলতে পারে না তাদের স্কুল জীবনে পড়া ছড়া কবিতা।
পাঠ্যবই নিয়ে আলাপচারিতায় ৬০-৭০ বছর বয়সী অনেক অভিভাবক ও শিক্ষক টানা আবৃত্তি করেছেন তাদের স্কুল জীবনের প্রিয় অনেক ছড়া কবিতা। খ্যাতিমান কবি আবুল হাশিমের ‘তারেকের স্বপ্ন’ আজো আন্দোলিত করে অনেককে। ৪০-৫০ বছর আগে পাঠ করা ‘পূজারী’, ‘আত্মশক্তি’, ‘মাতৃভক্তি’ এবং ষড়ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন ছড়া কবিতা আজো স্থান করে আছে অনেকের হৃদয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, সুন্দর অর্থ আর ছন্দের কারণে এখনো এসব ছড়া কবিতা তাদের মনে গেঁথে রয়েছে। এসব ছড়া কবিতা আজো তাদের আবেগ আপ্লুত করে অনুপ্রাণিত সত্য, ন্যায় এবং মানবিকতার প্রতি। অনুপ্রাণিত করে অন্যায় আর অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। তিনি বলেন, এসব ছড়া কবিতা পড়ে যেমন পাওয়া যেত সাহিত্যের স্বাদ তেমনি ছিল তাতে মনুষ্যত্ব বিকাশের শিক্ষা।
বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। লাইন দু’টি রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতার। কবিতাটি দীর্ঘ দিন ধরে পাঠ্য ছিল। এভাবে অনন্ত অসীম প্রেমময় তুমি/বিচার দিনের স্বামী, বৃষ্টি এল কাশবনে, জাগল সাড়া ঘাসবনে। বকের সারি কোথায়রে লুকিয়ে গেল বাঁশবনে, সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা, হে খোদা দয়াময় রহমান রহিম, হে বিরাট হে মহান হে অনন্ত অসীম প্রভৃতি পঙ্ক্তি শুনিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীতে এসব কবিতা আবার পাঠ্য করার অনুরোধ জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক ও শিক্ষক।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ছড়া
বর্তমানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর ছড়া কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা সর্বকালের জন্য উপযুক্ত এবং শিশুদের জন্য আনন্দদায়ক। মাঝখানে কিছু বিরতি ছাড়া দীর্ঘ কাল ধরে এসব ছড়া কবিতা পাঠ্য ছিল। আবেদনময়ী এসব ছড়া কবিতা পাঠ্য হিসেবে বহাল রাখায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেক অভিভাবক ও শিক্ষক। অন্যান্য শ্রেণীতেও এর প্রতিফলন হওয়া উচিত বলে মনে করেন তারা।
দ্বিতীয় শ্রেণীতে ‘আমাদের দেশ’, ‘আমি হব’, ‘আমাদের ছোট নদী’, ‘ট্রেন’, ‘প্রার্থনা’, ‘কাজের আনন্দ’ তৃতীয় শ্রেণীতে ‘তালগাছ’, ‘আমার পণ’, ‘আমাদের গ্রাম’, ‘আদর্শ ছেলে’ ও ‘ঘুড়ি’ প্রতিটি ছড়া শিশুদের জন্য মনকাড়া। প্রথম শ্রেণীতেও শিশুদের মনকাড়া তিনটি ছড়া রয়েছে যেমন ‘মামার বাড়ি’, ‘ভোর হলো’ ও ‘ছুটি’।
অনেক শিক্ষক ও অভিভাবক জানিয়েছেন বইয়ের ছবির ছাপার মান খুব একটা আকর্ষণীয় না হলেও ছবিগুলো দেখে শিশুরা আনন্দ পাচ্ছে। ছাপার মান উন্নত হলে ছবিগুলো আরো জীবন্ত এবং আকর্ষণীয় হতো শিশুদের কাছে। বইয়ের মানও আরো বাড়ত।

No comments:

Post a Comment