সাইমুম সাদি
মাদ্রাসার দায়িত্ব পালন করতে হলে ওয়াজ করতে হয়। ওয়াজ করতে না পারলে পাবলিক আপনাকে তেমন কাজের হুজুর বলে মনে করবেনা।কয়েক জায়গায় বাধ্য হয়ে ওয়াজ করলাম। খুব যে খারাপ হয় তেমন না। শুধু সুর করে ওয়াজ করতে একটু লজ্জা লাগে এই আরকি। লজ্জা এজন্য যে সুর যদি সেরকম না হয়ে বেসুরো হয়ে যায়!
প্রাকটিস করলে হয়ে যাবে, বললেন একজন।
প্রথম দিন ওয়াজের পর আয়োজক এগিয়ে দিলেন একটা খাম। ভেতরে দেড় হাজার টাকা। আমি আপত্তি করতে গেলে তিনি বললেন, দেখেন আপনি আমাদের নিজের লোক তাই কম টাকা দিলাম। আপত্তি করে লাভ নেই। আপনার গলায় যে সুর লাইনে উঠে গেলে কম টাকায় যাবেনই না ওয়াজে।
আমি বললাম কন কি মিয়া?
তিনি জানালেন, প্রথম প্রথম সবাই লজ্জা করে, পরে বেশীই নেয়।
বললাম, সবার ক্ষেত্রে সঠিক না। আমি কয়েকজন বক্তাকেই জানি যারা টাকা ছাড়াও ওয়াজ করেন। দিলে নেন না দিলে ডিমান্ড করেন না।
যাইহোক, দ্বিতীয় দিন ওয়াজের পর খাম খুলে দেখি পাঁচশো টাকার একটি নোট চকচক করছে। ভাবতে লাগলাম ওয়াজ কি খারাপ হয়ে যাচ্ছে? দেড় হাজার থেকে পাচশোতে চলে এসেছে কেনো?
কাউকে কিছুই বললাম না। সবার অজান্তে নোটটি ওই এলাকার মসজিদের দান বাক্সে রেখে দিলাম।
তৃতীয় দিন দিল দুই হাজার। পরের দিন এক হাজার। বুঝলাম, আমাদের মত নতুন লোকদের অবস্থা অনেকটা শেয়ার বাজারের মত উঠানামা করে।
মাঠে ময়দানে যে পরিমাণে ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে তাতে প্রচুর পাবলিকলি ওয়াজ করার মত লোক দরকার। কিন্তু নির্ভুল ও ইসলাহের নিয়তে বক্তৃতা করার মত লোকের অভাব প্রচুর।
একজন লোক তাফসির করতে হলে তাকে প্রায় পনেরোটা সাবজেক্ট জানতে হবে। কিন্তু তা ত নেই বললেই চলে। ইদানিংকার কোন কোন বক্তারা তেলাওয়াত করেন এক স্থান থেকে, অর্থ বলেন অন্যকিছু আর ব্যাখা ঠিক কোনখান থেকে করেন তিনি নিজেও বোধহয় জানেননা।
এজন্যই বলছিলাম তাফসির করার জন্য আলাদা ট্রেনিং করা দরকার। অন্তত একটা ডিপ্লোমা করার ব্যাবস্থা রাখতে হবে। সেই ব্যাবস্থা বেফাক কিংবা অন্য কেউ করতে পারেন।
আবারো বলছি যারা বর্তমানে মাঠে ওয়াজ করছেন তাদেরকে খাটো করে নয়, তাদের অবদানকে শ্রদ্ধাচিত্তে স্মরণ করেই বলব, আমাদের প্রচুর পরিমাণে মুফাসসির প্রয়োজন।
সেই চাহিদা পুরণের জন্য কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান কি এগিয়ে আসবেন?
No comments:
Post a Comment