Latest Post

কওমীর স্বীকৃতি ও দেবিমূর্তি বিরোধী বক্তব্য আর রাজনৈতিক স্বার্থের ভেল্কিবাজি: মুহাম্মাদ মামুনুল হক

ঢাকা ১৩ই এপ্রিল'১৭ আজকের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রধান শিরোনাম দেখে মনে পড়ছে দুই হাজার ছয়ের কথা ৷ যখন হযরত শায়খুল হাদীস রহঃএর দলের...

Tuesday, February 28, 2017

আহলে হাদীসের ভ্রান্ততার প্রমাণ

হযরত মাওলানা মুহাম্মদ ওমর মেখলী

সুপ্রিয় পাঠককে উদ্দেশ্য করে বলছি,
আপনি যদি হক নাহক, সত্য অসত্য বুঝার
মানসিকতা রাখেন, তবে সামান্য
কথাতেই আপনি বুঝতে পারবেন, কথিত
আহলে হাদীস কি? কাউকে ঘায়েল
করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং আমার
গবেষণায় যেটুকু উপলব্ধিতে আনতে
পেরেছি, তাই প্রকাশ করতে চেষ্টা
করছি। যদি কোন দ্বিধাগ্রস্ত বা
বিভ্রান্ত ব্যক্তি হিদায়াত প্রাপ্ত
হয়ে থাকেন, তার সওয়াব নিশ্চয়ই
আল্লাহ তাআলা আমার বেলায়ও বরাদ্দ
করবেন।
১। আহলে হাদীসদের দাবী হলো,
তাক্বলীদ করা যাবে না। তাক্বলীদ
যারা করে, তারা মুশরিকের
পর্যায়ভুক্ত। তবে ইত্তিবা করা যাবে।
তাদের এমন উক্তির জবাবে বলা যায়,
তাক্বলীদ আর ইত্তিবার মধ্যে পার্থক্য
কি? তাক্বলীদ অর্থ অনুসরণ, ইত্তিবা
অর্থও অনুসরণ।
২। তারা বুঝাতে চায়, তাক্বলীদ অর্থ
অন্ধ অনুসরণ। আর ইত্তিবা অর্থ দলীল
প্রমাণ দেখে আমল করা।
তাদের এ উক্তিতে খুব রস দেখা যায়।
অর্থাৎ- দলীল প্রমাণ দেখেই আমল করার
নাম ইত্তিবা। তারা সহীহ হাদীস
দেখে আমল করেন, এটি তাদের মুখ্য
দাবী। আচ্ছা হাদীসটা যে সহীহ, তা
কি রাসূল (সা.) বলেছেন, নাকি
আল্লাহ তাআলা বলেছেন। নাকি
হাদীসগুলো নবী (সা.) দিনের কোন এক
সময়ে তাদেরকে এসে বলে গেছেন?
বরং হাদীস সহীহ হওয়া আর জয়ীফ হওয়া,
সবই মুহাদ্দিসের কথার উপর নির্ভর করে।
অর্থাৎ- মুহাদ্দিসগণ অন্য লোক থেকে
হাদীসটি গ্রহণ করার সময় দেখেছেন
সে লোকের চরিত্র কি, তার মেধা কী
রকম? সে আহলে সুন্নাত ওয়াল
জামাতের লোক কি না? না কি সে
শিয়া বা খারেজী ইত্যাদি বাতিল
ফেরকার লোক? (সে সময় অবশ্য আহলে
হাদীস নামে কিছু ছিল না, তাই
মুহাদ্দিসগণ সে বিষয়ে যাচাই
করেননি। বর্তমানের কথিত আহলে
হাদীসরা যদি সে যুগে থাকতো, তবে
তাদেরকেও ঐরূপ বাতিল ফিরকায়
শামিল করে তাদের বর্ণিত হাদীসকে
শুধু জয়ীফ নয়, বরং মওজু বলতেন)। এসব
দিকসমূহ কঠোরভাবে যাচাই করার পর
যার কাছে নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী
সে লোককে ভাল পেয়েছেন, তার
কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন।
সেরূপ হাদীস সংরণকারী লোকদের
চরিত্র ইত্যাদি বিবেচনা করে যে
মুহাদ্দিস যাকে ভাল পেয়েছেন, তার
উপর নির্ভর করে হাদীসকে সহীহ বা
জয়ীফ বলে মত প্রকাশ করেছেন।
তাহলে বুঝা যায়, হাদীস জয়ীফ বা
সহীহ হওয়ার মাপকাঠি হলো একমাত্র
মুহাদ্দিসগণের মত। সে মতের
ভিত্তিতেই হাদীস সহীহ বা জয়ীফ
নির্ধারিত হয়ে থাকে। এটি এমন বিষয়,
যার কোন দলীল-প্রমাণ নেই। সেরূপ
মতকে অন্ধ বিশ্বাস করে কথিত আহলে
হাদীসরা হাদীস মানছে। তা কি অন্ধ
বিশ্বাস নয়? তা যদি অন্ধ বিশ্বাস না
হয়, তাহলে অন্ধ বিশ্বাস আর কাকে
বলা হবে?
কোন হাদীস তো এমন নেই যে,
বর্তমানেও আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল
এসে বলে দিচ্ছেন যে, এই হাদীসটি
সহীহ, এটি জয়ীফ। তাহলে কোন
দলীলের ভিত্তিতে তারা
হাদীসগুলোকে সহীহ বা জয়ীফ বলছেন।
যেহেতু হাদীছ জয়ীফ হওয়া এবং সহীহ
হওয়া মুহাদ্দিসের মতের উপর নির্ভর, সে
কারণে একই হাদীস এক মুহাদ্দিসের
কাছে সহীহ আরেক মুহাদ্দিসের কাছে
জয়ীফ বলে বিবেচিত। এখানেও
মতানৈক্য। এর ভিতর কথিত আহলে
হাদীসরা যদি যে কোন একজনের
হাদীস গ্রহণ করে, তাহলে বুঝা যায়
তারা যে কোন একটি মাযহাব বা মত
গ্রহণ করল। কারণ মাযহাব মানে হলো মত।
এই আলোচনা থেকে বুঝা গেল, আহলে
হাদীসরা মাযহাবও মানে আবার
অন্ধবিশ্বাস তথা তাক্বলীদও করে।
আচ্ছা দেখুন, তাদের তাক্বলীদটা
বেশি অন্ধ বিশ্বাস, নাকি মাযহাব
যারা মানেন তাদের তাক্বলীদটা
অন্ধ বিশ্বাস। মাযহাব যারা মানেন,
তারা শরয়ী মাসআলার দলীল অনুসন্ধান
করতে গেলে কুরআন হাদীস সামনে
আছে। সেখান থেকে দলীল খুঁজে তার
মাযহাবের মতটা সঠিক, না বেঠিক;
তা বিচার করতে পারেন।
কিন্তু তথাকথিত আহলে হাদীসরা
কোন দলীলের ভিত্তিতে হাদীস
মানেন? কারণ যে সকল বর্ণনাকারীর
চরিত্র ও মেধা ইত্যাদির উপর নির্ভর
করে মুহাদ্দিসগণ হাদীসকে সহীহ বা
জয়ীফ বলেছেন, সে সকল রাবী তো
একজনও জীবিত নেই। তাহলে তারা ঐ
রাবী ভাল ছিলেন কি খারাপ
ছিলেন, তা জানার কোন উপায়ও নেই।
তাহলে বুঝা যায় কথিত আহলে
হাদীসরা যাদের মত অনুসরণ করে,
যাদের কথার অধীনে চলে, যাদের অন্ধ
তাক্বলীদ করে, তাদের মত প্রমাণ করার
জন্য কোন দলীল পাওয়াও সম্ভব নয়। বরং
দলীল প্রমাণ ছাড়াই খালেস অন্ধ
বিশ্বাসের মাধ্যমেই মুহাদ্দিসের কথা
মান্য করতে হচ্ছে।
এখন পাঠক মহোদয় বিচার করুন, যারা
মাযহাব মানে তাদের তাক্বলীদটা
অন্ধ বিশ্বাস, নাকি কথিত আহলে
হাদীসদের তাক্বলীদটা পুরোপুরি অন্ধ
বিশ্বাস?
এখন আপনি নিজেই বলুন, তাদের ভাষায়
যদি তাক্বলীদ করা শিরক হয়, তাহলে বড়
শিরিক কারা করে থাকেন? আহলে
হাদীস না মাযহাবীগণ?
আরো দেখুন, বর্তমানে আহলে
হাদীসরা হাদীসের বেলায় জনাব
আলবানী সাহেবকেই মানেন। কারণ
যে সকল হাদীসকে আলবানী সাহেব
সহীহ বলেছেন সেগুলোকেই তারা
সহীহ বলেন। বাকী সবগুলোকে তারা
জয়ীফ বলে উপহাস করেন।
এক. হাদীস নিয়ে উপহাস করা ঈমান
বিধ্বংসী। দুই. তারা ইসলাম ধর্মের
চৌদ্দশ বছর পরে এসে এহেন ফিতনার
যুগের কোন একজন লোককেই নিজেদের
ইমাম মানছেন। আর যারা মাযহাব
মানে তারা তাবেয়ী, তাবে-
তাবেয়ীদের যুগের লোকদেরকেই
মানেন। যাদের কাছে হাদীস
পৌঁছেছে মাত্র এক বা দুই মাধ্যমের
দ্বারা। যারা নবী (সা.) ও সাহাবী
যুগের একেবারে সন্নিকটে। যাদের যুগ
যুগ ধরে ধর্মের ব্যাপারে সঠিক ও আহলে
হক্ব আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের
ইমাম বলে সর্বজন স্বীকৃতি দিয়ে
আসছে। যারা ইসলাম বিরোধী
যাবতীয় শক্তির সাথে মোকাবেলা
করে সঠিক ইসলাম বর্তমান যুগ পর্যন্ত
মুসলমানদের কাছে পৌঁছার ব্যবস্থা
করে গেছেন।
ইসলামের সে সোনালী ব্যক্তিদেরকে
কলুষিত করতে কথিত আহলে হাদীসদের
এক মিনিট সময় লাগে না। এমনকি কথিত
আহলে হাদীসরা সাহাবায়ে
কেরামকে পর্যন্ত মানতে নারাজ। এক
দিকে ১৩/১৪ শত বছর পরের লোকের
তাক্বলীদ করা, অপর দিকে ইসলামের
সোনালী যুগের ব্যক্তিদের
সমালোচনা করা, অধিকন্তু সাহাবায়ে
কেরামকে না মানা। এসবের মাধ্যমে
তারা যে ইসলামের মধ্যে ষড়যন্ত্রমূলক
একটি দলের প্রতিনিধিত্ব করছে, তার
অকাট্য দলীল নয় কি?
আচ্ছা, যারা তাক্বলীদ বা অন্ধ
বিশ্বাস করে এবং কথায় কথায় মিথ্যা
বলে তাক্বলীদ করার কথা অস্বীকার
করে, এটাই কি তাদের গোমরাহীর
দলীল নয়? তারা যেসকল মাসআলা
নিয়ে বিতর্ক করে, সেগুলোর সকল
প্রকার দলীল দেয়ার পর হুকুম বের হয়
হয়তো সুন্নাত বা মুস্তাহাব। একটা
মুস্তাহাবের জন্য পুরো মুসলিম দুনিয়ায়
মতপার্থক্য সৃষ্টির মতো কবীরা গোনাহ
করতে পারবে, এর প্রমাণ কোন সহীহ
হাদীসে আছে?
কথিত আহলে হাদীসরা বলেন, মাযহাব
মানে মতভেদ করা। আচ্ছা চার মাযহাব
দীর্ঘ দিন থেকে চলে এসেছে।
সেখানে পঞ্চম আরেকটি দল করে
মতভেদ বৃদ্ধি করা কোন ধরনের
যৌক্তিকতা বা কোন ধরনের ইসলাম
পালন? এটা মুসলমানদের বুঝা উচিত।
সামান্য একথাগুলো একটু চিন্তা করলে
আপনি একজন মুসলমান হিসেবে এ
সিদ্ধান্ত নিতে বাধা কোথায় যে,
আহলে হাদীস মুসলমানদের মধ্যে নতুন
করে মতভেদ সৃষ্টি করার জন্যই জন্ম
হয়েছে? মিথ্যা কথা বলাই এদের
স্বভাব। যারা সব সময় মিথ্যার মধ্যে
ডুবে থাকবে, যারা ইসলামের কর্ণধার
সাহাবায়ে কেরামকে পর্যন্ত মানতে
রাজি হবে না, এরা আবার কি করে
সঠিক ইসলামের দাবীদার হতে
পারবে?
প্রিয় পাঠক! আশা করি কথাগুলো
চিন্তা করবেন। আহলে হাদীসদের কাছ
থেকে এসবের জবাব চাইবেন। তখন
বুঝতে পারবেন, এরা কি সঠিক ইসলামে
আছে? নাকি ইসলামের নামে
মুসলমানদেরকে ধোঁকা দেয়ার জন্য
মাঠে ময়দানে কাজ করছে।
আমার মতে আহলে হাদীস যে একটি
ভ্রান্ত দল, তা বুঝার জন্য এর চাইতে
বেশি দলীল-প্রমাণ ও বক্তব্যের প্রয়োজন
পড়ে না। এর বাইরে দেখতে চাইলে
তাদের ইতিহাসও দেখা যায়। এরা
ইংরেজ সৃষ্ট কাদিয়ানীদের মতই
ইংরেজ কর্তৃক সৃষ্ট। সেটা দেখলে তো
আর বলতেই হয় না যে, এরা ভ্রান্ত দল।
বরং নিজে নিজেই বুঝে আসে। ওয়মা
আলাইনা ইল্লাল বালাগ। #

No comments:

Post a Comment