আলি আজম
আচ্ছা বায়ান্নতে যারা 'রাষ্ট্রভাষা বাঙলা চাই' বলে রাজপথে স্লোগান তুলেছিলেন তারা ধর্ম পরিচয়ে কি মুসলিম ছিলেন, নাকি অমুসলিম? সালাম, রফীক, জাব্বার, বরকতদের কেউতো অমুসলিম ছিলেন বলে মনে হয় না। আর মুসলিমরাতো কখনো কোনো প্রাণহীন ভাস্কর্য, স্মৃতিস্তম্ভ, কিংবা মিনারকে শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না। মূর্তিকে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা ইসলামতো সমর্থন করে না। সেদিন যারা মায়ের ভাষাকে পূর্ণ মর্যাদা দিতে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন তাদের কেউ কি বলে গিয়েছিলেন যে, তোমরা ভাষার জন্য আমাদের আত্মত্যাগ, অবদান আর ইতিহাসকে পরবর্তী প্রজন্ম পর্যন্ত পৌঁছে দিতে স্মৃতিস্তম্ভ বানিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে!?
.
জাতির গর্বিত সন্তান ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের কথা যুগযুগ পর্যন্ত স্মরণ রাখতে স্মৃতিসৌধ তৈরি করার এই প্রবণতা আসলো কোত্থেকে? তাতে তাদের আত্মা শান্তি লাভ করবে এমনটা ভাবাও বোকামি নয় কি? আর ইতিহাস স্মরণ রাখার জন্য কি স্মৃতিসৌধের প্রয়োজন আছে? কই! ইসলামের ইতিহাসের ছোটবড়ো জিহাদগুলোতে অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেওয়া অসংখ্য প্রকৃত শহীদ সাহাবীদের স্মৃতি স্মরণ রাখার জন্যতো কোনো ভাস্কর্য, স্মৃতিসৌধ তৈরির প্রয়োজন পড়েনি! শতশত বছর পূর্বে বদর, উহুদ, খায়বারে দ্বীনের জন্য জীবন বিলিয়ে দেওয়া শহীদদের স্মৃতিসৌধ তো পৃথিবীর কোথাও নেই। তারপরেও কি মুসলিমরা সেই বীর শহীদদের বীরত্বের কথা ভুলে গেছে?!
.
মুসলিম জাতির সেইসমস্ত বীর সেনানীদের কৃতিত্বপূর্ণ ইতিহাস আজ-অবধি গোটা পৃথিবী জানে। চৌদ্দশত বছর পূর্বের সাহাবীদের বীরত্বপূর্ণ সেই ইতিহাস, আত্মত্যাগ, আজও মুসলিমদের ঘুমন্ত চেতনাকে জাগ্রত করে তোলে বিধায় কুফফার শক্তি প্রতিনিয়ত নববী-সাহাবীদের সেই ঈমানী চেতনাবোধ দুনিয়া থেকে মুছে দিতে রাতদিন কোশেশ করে যাচ্ছে। অথচ ইসলামের ইতিহাসের সেইসমস্ত বীর শহীদদের কোনো ভাস্কর্য, মূর্তি, স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ, পৃথিবীর কোথাওতো নেই। তারপরেও মুসলমান তাদের আত্মত্যাগের কথা ভুলে যায়নি। রাসূল (স:) এর কোন প্রতিকৃতি পৃথিবীর কোথাও নেই। তার বাদেও কি আজ কোটি-কোটি মুসলিম তার উপর প্রতিনিয়ত শান্তির দরূদ পড়ে না?!
.
-তাহলে এসব কেনো করা হচ্ছে? আচ্ছা বুঝলাম তাদের আত্মত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্যই শহীদ মিনার কিংবা স্মৃতিস্তম্ভের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হচ্ছে। শহীদ মিনার তৈরি করা হচ্ছে। তবে এভাবে সারাজীবনও যদি স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দাঁড়িয়ে ভাষা শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য নীরবতা পালন করা হয় এর মাধ্যমে ভাষা শহীদরা কি কোনোপ্রকার শান্তি লাভ করবে?! অসম্ভব। উলটো আরো তারা আমাদের প্রতি আখেরি দিবসে মওলার দরবারে অভিযোগ তোলবে যে, তারা আমাদের ভাষার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন, অথচ আমরা তাদের আত্মার শান্তির জন্য কিছুই করিনি। উলটো তাদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা প্রদর্শনের নামে গানবাজনা আর অপসংস্কৃতির সয়লাব ঘটিয়েছি।
.
যদি সত্যিই আপনাদের মধ্যে দেশপ্রেম, মাতৃভাষাপ্রেম বেশি থাকে, তাহলে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল না দিয়ে শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য গরীব-দুখীদের বেশি করে ভালো করে খাবার খাওয়ান। কারণ, ফুল কবরবাসীর কোনো উপকার করতে পারে না । কিন্তু গরীবদের খানা খাওয়ালে নিঃসন্দেহে সওয়াব হবে, যা কবরে কাজে লাগবে । শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নামে কবরে ফুল দেওয়া, নীরবতা পালন করা সম্পূর্ন বিধর্মীদের কালচার। যা মুসলমানদের শোভা পায় না। এরধারা শহীদদের কোনো উপকারও হয় না। শহীদদের আত্মার শান্তির জন্য দুইরাকা'ত নামাজ পড়ুন। তাদের জন্য কোরআন খতম করুন। তাদের কবর জিয়ারত করুন। এটাই হচ্ছে আমাদের প্রতি তাদের চাওয়া-পাওয়া। আমরা তাদের জন্য তাই করে যাচ্ছি।
.
শুনে রাখো ভিনদেশী গোলাম, চর, ত্বাগুতের ভাড়াটিয়া মিডিয়া 'কালের কণ্ঠ', হুজুর কিংবা মাদ্রাসাওয়ালারা তো ২১শের পবিত্র চেতনা নিয়ে নোংরা রাজনীতি করে না। তাই লৌকিকতা তাদের মধ্যে থাকবে না সেই তো স্বাভাবিক। মাদ্রাসাগুলোতে ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২৬শে মার্চ, ১৫আগস্ট, ১৬ই ডিসেম্বর এই বিশেষ দিনগুলোতে কুরআন খতম করে শহীদের আত্মার শান্তির জন্য বিশেষভাবে দোয়া করা হয়। এই খবর রাম-বাম বিকৃত চেতনার শেখরভোলা সুবিধাবোগী মিডিয়া রাখবে না সেও স্বাভাবিক! ওরা খবর রাখবে, কোন নায়িকার কখন ঋতুশ্রাব হলো, কখন শেষ হলো! সাকিবের মেয়ে কখন হাগু করল,কখন পেশাব করল! যত্তসব কানা মিডিয়া! আমরা যা করি নিঃস্বার্থ করি। কাউকে দেখানোর জন্য নয়।
লেখক আলি আজম
No comments:
Post a Comment