Latest Post

কওমীর স্বীকৃতি ও দেবিমূর্তি বিরোধী বক্তব্য আর রাজনৈতিক স্বার্থের ভেল্কিবাজি: মুহাম্মাদ মামুনুল হক

ঢাকা ১৩ই এপ্রিল'১৭ আজকের প্রথম আলোর প্রথম পাতায় প্রধান শিরোনাম দেখে মনে পড়ছে দুই হাজার ছয়ের কথা ৷ যখন হযরত শায়খুল হাদীস রহঃএর দলের...

Sunday, February 26, 2017

পথ ও পথিকের হক

সমাজবদ্ধ জীবনে পথের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর সেই পথটি সবসময়ের জন্যেই নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত থাকবে, নির্ভয়ে নিশ্চিন্ত মনে আপন সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করে সেই পথ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যাবেÑএটি একজন পথিকের হক ও অধিকার। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকেই পথে ধরে চলতে হয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর কিংবা সর্বোচ্চ বিত্তবান ব্যক্তি থেকে শুরু করে খেটে খাওয়া দিনমজুর পর্যন্ত সকলকেই জীবনের তাগিদে পথে আসতে হয়। নিরাপদ পথের অধিকার তাই সকলের। আবার এ অধিকার সংরক্ষণও সমাজের মানুষকেই করতে হবে। সুন্দরতম আচরণের পূর্ণতাবিধানকারীরূপে যে নবী প্রেরিত হয়েছিলেন, আমরা তো তাঁরই উম্মত। তাঁর বাণীতেই আমরা খুঁজে পাই পথ ও পথিকের হক।
পথের অধিকার সম্পর্কে এই হাদীসটি খুবই প্রসিদ্ধÑ
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ
ﺇِﻳَّﺎﻛُﻢْ ﻭَﺍﻟْﺠُﻠُﻮﺱَ ﺑِﺎﻟﻄُّﺮُﻗَﺎﺕِ، ﻓَﻘَﺎﻟُﻮﺍ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ! ﻣَﺎ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﻣَﺠَﺎﻟِﺴِﻨَﺎ ﺑُﺪٌّ، ﻧَﺘَﺤَﺪَّﺙُ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺑَﻴْﺘُﻢْ ﺇِﻻَّ ﺍﻟْﻤَﺠْﻠِﺲَ، ﻓَﺄَﻋْﻄُﻮﺍ ﺍﻟﻄَّﺮِﻳﻖَ ﺣَﻘَّﻪُ، ﻗَﺎﻟُﻮﺍ : ﻭَﻣَﺎ ﺣَﻖُّ ﺍﻟﻄَّﺮِﻳﻖِ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ! ﻗَﺎﻝَ : ﻏَﺾُّ ﺍﻟْﺒَﺼَﺮِ، ﻭَﻛَﻒُّ ﺍﻷَﺫَﻯ، ﻭَﺭَﺩُّ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡِ، ﻭَﺍﻷَﻣْﺮُ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑِ ﻭَﺍﻟﻨَّﻬْﻲُ ﻋَﻦِ ﺍﻟْﻤُﻨْﻜَﺮِ .
তোমরা পথে বসা থেকে বিরত থেকো। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কথাবার্তা বলার জন্যে যে আমরা পথে না বসে পারি না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি তোমাদের পথে বসতেই হয় তাহলে পথের হক আদায় করো। তারা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পথের হক কী? তিনি বললেন, ‘দৃষ্টি অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, সালামের উত্তর দেয়া, সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ৬২২৯
হযরত আবু হুরায়রা রা.ও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও তাঁর বর্ণিত হাদীসটিতে আরও রয়েছেÑ
ﻭَﺗَﺸْﻤِﻴﺖُ ﺍﻟْﻌَﺎﻃِﺲِ، ﻭَﺇِﺭْﺷَﺎﺩُ ﺍﻟﺴَّﺒِﻴﻞ ...
এবং হাঁচির জবাব দেয়া এবং (মানুষকে) পথ দেখিয়ে দেওয়া। Ñমুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৬৬০৩
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বর্ণিত হাদীসে রয়েছেÑ
ﻭَﺗُﻐِﻴﺜُﻮﺍ ﺍﻟْﻤَﻠْﻬُﻮﻑَ ﻭَﺗَﻬْﺪُﻭﺍ ﺍﻟﻀَّﺎﻝَّ ...
এবং তোমরা নির্যাতিত ব্যক্তিকে সাহায্য করবে এবং পথ-সন্ধানীকে পথের সন্ধান দেবে। Ñসুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮১৯
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেছেনÑ
... ﻭَﺃَﻋِﻴﻨُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺤﻤُﻮﻟَﺔِ ...
এবং তোমরা বোঝা উঠিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করো। Ñমুসনাদে বাযযার, হাদীস ৫২৩২
হযরত আবু তালহা রা. বর্ণিত হাদীসে আছেÑ
... ﻭﺣﺴﻦ ﺍﻟﻜﻼﻡ ...
এবং সুন্দর কথা বলো। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৬১
উপরোক্ত হাদীসগুলোতে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথের যে অধিকারগুলো বর্ণনা করেছেন তা আমরা এভাবে উপস্থাপন করতে পারি:
.
১. দৃষ্টি অবনত রাখা
দৃষ্টিকে বলা হয় শয়তানের একটি বিষাক্ত তীর। এই দৃষ্টির মাধ্যমেই সূচনা হয় নারী-পুরুষের অবৈধ সম্পর্কের। এর ফলশ্রæতিতে ধীরে ধীরে বিনষ্ট হয় পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি। পথে চলার অধিকার নারী-পুরুষ সকলেরই রয়েছে। পথে বের হতে হলে নারীকে কীভাবে বের হতে হবে, কেমন পোশাক পরতে হবে তা একটি স্বতন্ত্র বিষয়। তবে কোনো সম্ভ্রান্ত নারী যখন পথ চলে তখন কোনো পুরুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকাকে সে নিজের জন্যে সম্ভ্রমহানিকর মনে করে। পরিচিত কিংবা অপরিচিত কোনো পুরুষ যদি তাকিয়ে থাকে তাহলে অনেক নারী পর্দাবৃত থাকা সত্তে¡ও পথ চলতে অস্বস্তি বোধ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এজন্যেই নির্দেশ দিয়েছেনÑপথের ধারে বসলে দৃষ্টি অবনত রাখো। আর পবিত্র কুরআনে তো নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণিকে ভিন্ন ভিন্নভাবে দৃষ্টি অবনত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
ﻗُﻞْ ﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻐُﻀُّﻮﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻢْ .
হেনবী, তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে...। Ñসূরা মুমিনুন (২৩) : ৩০
ﻭَﻗُﻞْ ﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﻳَﻐْﻀُﻀْﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻦَّ .
আরহেনবী, তুমি মুমিন নারীদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে...। Ñসূরা মুমিনুন (২৩) : ৩১
.
২. কাউকে কষ্ট না দেওয়া
এ বিষয়টি অত্যন্ত ব্যাপক। একজন মুসলমানের প্রাণ, সম্পদ, সম্ভ্রমÑসবকিছুই সম্মানের পাত্র। অন্যায়ভাবে কারও জান-মাল ও ইজ্জত-সম্মানের ওপর হামলা করা ইসলামে নিষিদ্ধ। অন্যায়ভাবে কাউকে কোনোরূপ কষ্ট দেয়া যাবে না, চাই সেটা শারীরিক হোক বা মানসিক, ধন-সম্পদের বিষয়ে হোক বা মান-সম্মানের ওপরই হোক। এক্ষেত্রে কুরআনে কারীমের সুস্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﻣَﺎ ﺍﻛْﺘَﺴَﺒُﻮﺍ ﻓَﻘَﺪِ ﺍﺣْﺘَﻤَﻠُﻮﺍ ﺑُﻬْﺘَﺎﻧًﺎ ﻭَﺇِﺛْﻤًﺎ ﻣُﺒِﻴﻨًﺎ .
যারা মুমিন নারী-পুরুষদের পীড়া দেয়, এমন কোনো অপরাধের বিষয়ে যা তারা করেনি, তারা তাহলে অপবাদ ও সুস্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে নিল। Ñসূরা আহযাব (৩৩) : ৫৮
মুসলমান ভাইদের কোনোরূপ কষ্ট না দেয়াÑএ বিষয়টিকে তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মুসলমানের পরিচয় হিসেবেই উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন,
ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﻣَﻦْ ﺳَﻠِﻢَ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤُﻮﻥَ ﻣِﻦْ ﻟِﺴَﺎﻧِﻪِ ﻭَﻳَﺪِﻩِ .
অর্থাৎ মুসলমান তো সেই, যার যবান ও হাত থেকে অন্য মুসলমানেরা নিরাপদ থাকে। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১০
প্রয়োজনীয় কথা বলার জন্যে হোক কিংবা বিশ্রামের জন্যে হোক, পথের পাশে যদি কেউ বসে তাহলে অবশ্যই তাকে এমন সব কাজকর্ম থেকে বিরত থাকতে হবে, যাতে কোনো পথিক কষ্ট পেতে পারে। শুধু মুসলমান নাগরিকই নয়, নিরাপদ পথের অধিকার অমুসলিমদেরও। এমনকি অন্য কোনো প্রাণীকেও তো অনর্থক কষ্ট দেয়া যাবে না।
.
৩. সালামের উত্তর দেওয়া
একজন মুসলমান যখন আরেকজন মুসলমানকে সালাম দেয় তখন সেই সালামের উত্তর দেয়া ওয়াজিব। এই উত্তর সালামপ্রদানকারীর অধিকার। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
ﺣَﻖُّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢِ ﺧَﻤْﺲٌ : ﺭَﺩُّ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡِ ﻭَﻋِﻴَﺎﺩَﺓُ ﺍﻟْﻤَﺮِﻳﺾِ، ﻭَﺍﺗِّﺒَﺎﻉُ ﺍﻟْﺠَﻨَﺎﺋِﺰِ، ﻭَﺇِﺟَﺎﺑَﺔُ ﺍﻟﺪَّﻋْﻮَﺓِ، ﻭَﺗَﺸْﻤِﻴﺖُ ﺍﻟْﻌَﺎﻃِﺲِ .
পাঁচটি বিষয় এক মুসলমানের ওপর আরেক মুসলমানের অধিকারÑসালামের উত্তর দেওয়া, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাওয়া, জানাযায় শরিক হওয়া, নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা এবং হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে এর উত্তরে ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা। Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ১২৪০
পরস্পর দেখা-সাক্ষাতে মুসলমানগণ সালামের মাধ্যমেই অভিবাদন জানায়। একে অন্যের জন্যে আল্লাহর দরবারে শান্তি ও রহমত কামনা করে। আর পারস্পরিক এই কল্যাণ কামনা তাদের মাঝে রোপন করে ভালোবাসা ও আন্তরিকতার বীজ। হাদীস শরীফেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামকে পারস্পরিক ভালোবাসা ও ঘনিষ্ঠতাকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলার মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হাদীসটি হযরত আবু হুরায়রা রা. কর্তৃক বর্ণিতÑ
ﻻَ ﺗَﺪْﺧُﻠُﻮﻥَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ ﺣَﺘَّﻰ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ، ﻭَﻻَ ﺗُﺆْﻣِﻨُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺤَﺎﺑُّﻮﺍ، ﺃَﻭَﻻَ ﺃَﺩُﻟُّﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺷَﻰْﺀٍ ﺇِﺫَﺍ ﻓَﻌَﻠْﺘُﻤُﻮﻩُ ﺗَﺤَﺎﺑَﺒْﺘُﻢْ ﺃَﻓْﺸُﻮﺍ ﺍﻟﺴَّﻼَﻡَ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ .
তোমরা যতক্ষণ ঈমান না আনবে ততক্ষণ বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর যতক্ষণ পরস্পরে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে না ততক্ষণ তোমাদের ঈমানও পূর্ণ হবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি আমলের কথা বলে দেব না, যা করলে তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে। নিজেদের মাঝে সালামের প্রচলন ঘটাও। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস৫৪
সালামের উত্তর দেয়াকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথের হক হিসেবে গণ্য করেছেন। পথের পাশে বসে থাকা ব্যক্তিকে পথিক যখন সালাম দেবে, তখন যেন সে পথিকের সালামের উত্তর দেয়।
.
৪. সৎ কাজের আদেশ করা এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা
সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা এই উম্মতের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। পথে যদি কোনো অন্যায় কাজ চোখে পড়ে তখন সাধ্যমতো বাধা দিতে হবে এবং সৎ কাজের আদেশ করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সামর্থ্যরে প্রতি লক্ষ রাখবে এবং নিজের সামর্থ্যটুকু যথাযথ ব্যবহারের প্রতিও যতœবান হবে। এটাই হাদীসের শিক্ষা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
ﻣَﻦْ ﺭَﺃَﻯ ﻣِﻨْﻜُﻢْ ﻣُﻨْﻜَﺮًﺍ ﻓَﻠْﻴُﻐَﻴِّﺮْﻩُ ﺑِﻴَﺪِﻩِ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﺒِﻠِﺴَﺎﻧِﻪِ، ﻓَﺈِﻥْ ﻟَﻢْ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻊْ ﻓَﺒِﻘَﻠْﺒِﻪِ، ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺿْﻌَﻒُ ﺍﻹِﻳﻤَﺎﻥِ .
তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় কাজ দেখে তখন যেন সে নিজ হাতে তা প্রতিহত করে। যদি তা তার পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে মুখে বাধা দেবে। যদি তাও না পারে তাহলে অন্তরে তা ঘৃণা করবে। আর এটিই ঈমানের সর্বনি¤œস্তর।Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস৪৯
.
৫. হাঁচির জবাব দেওয়া
হাঁচির পর আলহামদুলিল্লাহ বলা সুন্নত। তখন যে আলহামদুলিল্লাহ বলা শুনবে, তার কর্তব্য ‘ইয়ারহামুকাল্ল
াহ’বলা। এর মাধ্যমে যে হাঁচি দিল তার জন্যে কল্যাণের দোয়া করা হয়। এটিই হাঁচির জবাব। পথচলার সময় কোনো পথিক যদি হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে আর পথের পাশে বসে থাকা ব্যক্তি যদি তা শোনে তাহলে তার কর্তব্য ইয়ারহামুকাল্লাহ (আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন) বলে তার কল্যাণ কামনা করা। উপরে সালামের উত্তর দেয়া প্রসঙ্গে যে হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে তাতে হাঁচির জবাবের বিষয়টিও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আরেকটি হাদীস, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক মুসলমানের ওপর আরেক মুসলমানের ছয়টি হক ও অধিকার রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেনÑসেগুলোকী? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
ﺇِﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴﺘَﻪُ ﻓَﺴَﻠِّﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺩَﻋَﺎﻙَ ﻓَﺄَﺟِﺒْﻪُ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺍﺳْﺘَﻨْﺼَﺤَﻚَ ﻓَﺎﻧْﺼَﺢْ ﻟَﻪُ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻋَﻄَﺲَ ﻓَﺤَﻤِﺪَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻓَﺴَﻤِّﺘْﻪُ، ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺮِﺽَ ﻓَﻌُﺪْﻩُ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻣَﺎﺕَ ﻓَﺎﺗَّﺒِﻌْﻪُ .
তুমি যখন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে তখন তাকে সালাম দেবে, যখন সে তোমাকে নিমন্ত্রণ জানাবে তখন নিমন্ত্রণ গ্রহণ করবে, যখন সে তোমার নিকট উপদেশ চাইবে তখন তাকে উপদেশ দেবে, যখন সে হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলবে তখন (ইয়ারহামুকাল্লাহ বলে) তার জন্যে কল্যাণ প্রার্থনা করবে, সে অসুস্থ হয়ে পড়লে দেখতে যাবে আর মৃত্যু বরণ করলে তার জানাযায় শরীক হবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৬২
.
৬. সুন্দর কথা বলা এবং পথ দেখিয়ে দেওয়া
পথচলা যেমন মানবজীবনের একটি স্বাভাবিক অনুষঙ্গ, তেমনি চলার পথে পথ না চেনা কিংবা চলতে চলতে পথ হারিয়ে ফেলাও একটি অতি সাধারণ বিষয়। পথের সন্ধানে পথিক তখন পথে থাকা কারোর ওপরই ভরসা করে। তার কাছে সে জানতে চায় আপন গন্তব্যের ঠিকানা। যারা পথের ধারে বসে থাকে তাদের নিকট এটি পথিকের অধিকার। কেউ পথ জানতে চাইলে তাকে তার পথটি দেখিয়ে দিতে হবে। এরই পাশাপাশি তার সঙ্গে কৃত আচরণও যেন সুন্দর হয়, হাদীস শরীফে এদিকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং একেও পথের হক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দিষ্ট পথটি জানা থাকলে তাকে তা দেখিয়ে দিতে হবে হৃদ্যতা ও উদারতার সঙ্গে, আর জানা না থাকলেও তার সঙ্গে কোমল আচরণ করতে হবে। এটাই এ হাদীসের দাবি। কর্কশ ও অসুন্দর আচরণ করা যাবে না কিছুতেই।
এক হাদীসে এ পথ দেখানোকে ‘সদকা’হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনÑ
ﻭَﺇِﺭْﺷَﺎﺩُﻙَ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞَ ﻓِﻲ ﺃَﺭْﺽِ ﺍﻟﻀَّﻼَﻝِ ﻟَﻚَ ﺻَﺪَﻗَﺔٌ .
তুমি কাউকে তার অচেনা পথ দেখিয়ে দিলে, এটি তোমার জন্যে একটি সদকা। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৫৬
আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
ﻣَﻦْ ﻣَﻨَﺢَ ﻣَﻨِﻴﺤَﺔَ ﻟَﺒَﻦٍ ﺃَﻭْ ﻭَﺭِﻕٍ ﺃَﻭْ ﻫَﺪَﻯ ﺯُﻗَﺎﻗًﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﻣِﺜْﻞَ ﻋِﺘْﻖِ ﺭَﻗَﺒَﺔٍ .
যে ব্যক্তি কোনো দুগ্ধবতী বকরি দান করে অথবা কাউকে ঋণস্বরূপ অর্থ প্রদান করে কিংবা কাউকে পথ দেখিয়ে দেয় সে একটি গোলাম আজাদ করার সওয়াব লাভ করবে। Ñজামে তিরমিযী, হাদীস ১৯৫৭
.
৭. নির্যাতিত ব্যক্তিকে সাহায্য করা
একজন মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন আরেকজন মানুষই তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসে। এটি মানবতা ও নৈতিকতার দাবি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র বাণীতে এটি আলোচিত হয়েছে পথের অধিকার হিসেবে। কোনো পথিকের ওপর যদি অন্যায়ভাবে কেউ হামলে পড়ে, কোনো সন্ত্রাসী কিংবা ছিনতাইকারীর আক্রমনে কোনো পথিকের অর্থসম্পদ প্রাণ কিংবা সম্মান-সম্ভ্রম ঝুঁকির মুখে পড়ে, তখন পথের পাশে বসে থাকা ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে এই নির্যাতিত পথিকের সহযোগিতায়। আক্রান্ত ব্যক্তিটির জাত-ধর্ম এক্ষেত্রে কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়, সে একজন পথিক এবং নিরাপদে পথ চলার অধিকার তার রয়েছেÑএটিই মূল কথা। অন্যায় মোকাবেলার সামর্থ্য থাকা সত্তে¡ও কাউকে নির্যাতিত হতে দেখেও না দেখা কিংবা নীরবতা অবলম্বন করা প্রকারান্তরে অন্যায়কে সমর্থন ও সহযোগিতা করারই শামিল।
হাদীস শরীফের ভাষ্য, নির্যাতিত ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়ে অন্যায় থামিয়ে দেয়াÑএতে জালেম-মজলুম উভয়কেই সহযোগিতা করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য করো, সে জালেম হোক আর মজলুম হোক। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! মজলুমকে তো আমরা সাহায্য করব ঠিক, কিন্তু জালেমকে সাহায্য করব কীভাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,
ﺗﺄﺧﺬ ﻓﻮﻕ ﻳﺪﻳﻪ .
তুমি তার হাত ধরে ফেলবে। (অর্থাৎ তাকে তার অন্যায় থেকে ফিরিয়ে রাখাটাই তার জন্যে সহযোগিতা।) Ñসহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৪৪
.
৮. বোঝা উঠিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করা
বোঝার ভারে ক্লান্ত হয়ে একজন ভারবাহী মানুষ কখনো তার বোঝাটি কিছু সময় নামিয়ে রাখে। মাথা থেকে কিংবা ভারবাহী কোনো বাহন থেকে পড়েও যেতে পারে কোনো বোঝা। ক্লান্ত শ্রান্ত সে পথিক তখন একজন মানুষের অপেক্ষায় থাকে, যে তার বোঝাটি ওঠাতে সহযোগিতা করবে। পথের পাশে বসতে হলে পথিকের এ জাতীয় সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে হবেÑএটিও পথের অধিকার, পথিকের অধিকার।
মোটকথা, পথের সৃষ্টিই পথিকের জন্যে। পথিক চলাচল করবেÑএতেই পথের স্বার্থকতা। তাই পথে বসে এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে পথিকের পথচলা বিঘিœত হতে পারে। বরং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পথিকের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সামর্থ্য উজার করে তার সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। এও মনে রাখতে হবে, প্রথমোক্ত হাদীসটিতে পথের পাশে বসার যে বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে সেটি কেবলই একটি প্রাসঙ্গিক বিষয়। হাদীসটির ভাষ্য হলো, যদি পথের পাশে তোমাকে বসতেই হয় তাহলে পথের এ অধিকারগুলো আদায় করো। এর অর্থ এই নয়Ñযারা পথে পথে বসে থাকবে তারাই কেবল পথের এ অধিকারসমূহ আদায় করবে। বরং এ অধিকারসমূহ পথ ও পথিকের। যারা কথাবার্তা বলা কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনে পথের পাশে বসবে তারা যেমন এ অধিকারসমূহ আদায়ে সচেষ্ট হবে, তেমনি যারা পথিক কিংবা পথের পাশের দোকানদার, তাদেরকেও এ বিষয়গুলোর প্রতি যতœবান হতে হবে। এটিই ইসলামের আদর্শ। নিজেকে ইসলামের সত্যিকার অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিতে হলে এ আদর্শ আমাদের ধারণ করতেই হবে।
.
-- মাওলানা শিব্বীর আহমদ
.
[ মাসিক আলকাউসার » মুহাররম ১৪৩৭ . নভেম্বর ২০১৫ ]

No comments:

Post a Comment